মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। সেই চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা করে দেখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কিছুদিন পরে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব মাহে রমজান। সেদিকেও গুরুত্ব দিতে হবে, যাহাতে রোজাদারদের কষ্ট না হয়। চ্যালেঞ্জগুলো কি তা হালো- দুর্নীতি ও টাকা পাচারের পথ বন্ধ করা এবং দেশের টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অবনতির পথ চিরদিনের জন্য বন্ধ করা। সাধারণ মানুষকে শোষন করে সম্পদের পাহাড় গড়ার জন্য যারা নিত্যপণ্যের মূল্য নিত্য নতুন রূপে বৃদ্ধি করে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয়, হাসি কেড়ে নেয় ও শোষন করে টাকা নিয়ে যায় সেসব সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে জাতিকে বিজয়ের ফসল ভোগ করার সুযোগ দেয়ার আলোকিত পথ সৃষ্টি করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব সিন্ডিকেট চক্রের হাত থেকে সরকারের হাতে নিতে হবে এবং সরকার ও মন্ত্রী পরিষদকে অবশ্যই সাধারণ মানুষের দরদী হয়ে কাজ করতে হবে। দেশের সাধারণ মানুষসহ অনেক পেশা ও শ্রেণীর মানুষ অত্যন্ত ভালো মানুষ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি কথা হচ্ছে, কতিপয় ঘৃনীত রাজনীতিবিদদের ষড়যন্ত্রের শিকার। কোন রাজনৈতিক দল বা সরকার ভালো মানুষদেরকে ভালো পথে কাজে লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ এবং সহায়তা করেন নাই বরং অনৈতিকভাবে মানুষকে ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে এবং রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করেছেন। তাই দালাল চক্রের সুপারিশ বলে নয়, সাধারণ মানুষের সার্বিক অবস্থা সরাসরিভাবে দেখে, জেনে ও পর্যালোচনা করে ভালো মানুষদেরকে সহায়তা দিয়ে প্রকৃত মানুষের উন্নয়ন সাধন করার পথ বেছে নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে সরকারি ও দুর্বল মানুষের জমি, দেশের খাল, নদী দখল করে দালান তোলা ও ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা। উন্নয়নমূলক কোন প্রকল্পে যাহাতে দুর্নীতি হতে না পারে এবং সুবিধাবাদিরা যাহাতে জাতির টাকা চুরি করে অবৈধ উন্নয়ন ঘটাতে ও অতিরিক্ত সুবিধাভোগী হতে না পারে সেপথ বন্ধ করতে হবে। কেউ কেউ দুর্নীতি, টাকা পাচার, অবৈধভাবে সরকারি-বেসরকারি জমি দখলে নিয়ে দালাল তুলে ভাড়া দেওয়াসহ ইত্যাদি অপরাধ করে সম্পদের পাহাড় গড়ে যা জাতীয় রোগে পরিণত হয়েছে। এর ফলে সমাজের ভালো মানুষগুলোও আক্রান্ত হবে। অনেকে দুর্নীতি ও টাকা পাচারসহ ইত্যাদি অপরাধ করে থাকে স্ত্রী ও সন্তানদের উচ্চাভিলাসী চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে। এগুলো আমলে নিয়ে এবং গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা প্রতিটি প্রতিনিধির দায়িত্ব ও কর্তব্য। চেয়ার ও পদবীর মর্যাদার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দামি সম্পদ আর হতে পারে না। এ বিষয়গুলো বুঝে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করলে অবশ্যই আলোকিত পথ সৃষ্টি হবে। এমপি-মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রতি নজরদারি রাখতে হবে এবং তাদেরকে আইনের আওতায় নেওয়ার জন্য আইনকে আইনের গতিতে পরিচালিত হওয়ার ও আইনের আওতায় নেওয়ার প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে দিতে হবে। পাশাপাশি দুর্ভিক্ষ ও মন্দা যাহাতে ঠেকানো যায় সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রয়োজনে দুর্নীতিবাজ ও টাকা পাচারকারীদের কাছ থেকে জাতির টাকা উদ্ধার করে জাতির প্রয়োজনে কাজে লাগাতে হবে। আলোচনা ও সমালোচনা অতীতেও ছিল, আছে. থাকবে। এরই মধ্যথেকে ভালো কাজগুলো বেছে বেছে জাতীয় স্বার্থে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি নানামুখী কল্যাণকর বিষয় নিয়ে ভাবতে ও বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অবশ্যই গ্রহন করতে হবে। তাহলে আধারের আলোচনাগুলো আলোর আলোচনায় স্থান পাবে। সকলের মাঝে ধর্মীয় চেতনার আলো যাহাতে সজিব হয় এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে সেই পথে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করতে হবে। জীবন চিরস্থায়ী নয়, এ কথা কিন্তু কথার কথা নয়, বাস্তবতা। চিরস্থায়ী হবে প্রতিটি মানুষের পরবর্তী জীবন। এই বিষয়গুলো বাস্তবে আমলে নিয়ে মাথায় প্রবেশ করাতে পারলেই অনেক অপকর্ম আপনা-আপনি নির্মুল হয়ে যাবে এবং ভালো কাজগুলো করার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং ভালো কাজ করতে মজা পাবে এবং আগ্রহ বৃদ্ধি হবে। আর এই পথগুলো সৃষ্টি করার দায়িত্ব সরকার ও প্রশাসনের এবং সচেতন নেতৃবৃন্দের। সাধারণ পরিবারের মেধাসম্পন্ন ছেলে- মেয়েরা শিক্ষায় উন্নতি লাভ করতে পারে না, অতিরিক্ত ভর্তি ফি ও বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধও করতে পারে না। সেক্ষেত্রে শিক্ষার উন্নয়নের দিকেও চিন্তা রাখতে হবে।
উক্ত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা এবং বাধা উপেক্ষা করে যেতে পারলেই নেতৃত্বের জীবন স্বার্থকের প্রতীক হবে এবং অনেকের ভুল ধারণা ভেঙ্গে যাবে। নৌকার প্রধান মাঝি প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য সহযোগী মাঝি। সুতরাং নৌকা ও বঙ্গবন্ধুর ইজ্জত, আশা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাদেরকেও প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকে পরিপূর্ণ ও স্বচ্ছ সহযোগিতা করতে হবে এবং জাতির চাহিদা বুঝে দায়-দায়িত্ব পালন করতে হবে, দেশ ও জাতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। জনপ্রিয়তা অর্জনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে প্রয়োজন জাতির স্বার্থে দুঃসাহসিক অনেক ভালো কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা ও কর্মসূচি হাতে নেওয়া এবং মানুষের সাথে প্রতিনিধির পরিচয়ের আলোকে নয়, ভালো প্রতিনিধি ও যোগ্য অভিভাবক হিসেবে ভালোভাবে কথা বলা। জনপ্রিয়তা অর্জন ও মানুষের সমর্থন লাভের জন্য এর চেয়ে বিকল্প ভালো কোন পথ নেই। সর্বোপরি স্বীকার করতে হবে যে, কোন বিদেশীদের কথায় নয়, জাতির প্রয়োজনে ১৯৭১ এবং ১৯৫২ সালে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। সেই রক্তাক্ত ইতিহাসকে মূল্যায়ন করে যে কাজগুলো করা প্রয়োজন সেই কাজগুলো বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে হবে। তা না হলে আমাদের পূর্বসূরী ও শহীদদের ত্যাগ ও অবদান ম্লান হয়ে যাবে, যা আমরা চাই না। আমাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হবে যে, যুদ্ধ করে, রক্ত দিয়ে, ত্রিশ লক্ষ শহীদদের জীবন দিয়ে, দুই লক্ষ মা-বোনদের ইজ্জত হারিয়ে পাকিস্তানী দুঃশাসক ও শোষকদেরকে তাড়ানো সম্ভব হয়েছে। তবে কেন জাতীয় স্বার্থে আইনের ধারা প্রয়োগ করে স্বদেশী শত্রু নির্মুল করা সম্ভব হবে না এবং ওদের কারণে কেন দেশ ও জাতি উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবে? ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধারা ত্যাগ ও অবদানের মূল্যায়ন স্বরূপ উপাধি লাভ করেছে। আমি দাবি করছি, ওদের কর্মকান্ডের মূল্যায়ন স্বরূপ ওদেরকেও উপাধি দেওয়া উচিত, জাতি যাহাতে ওদেরকে চিনেন ও জানেন। বাংলাদেশ একটি ঘর, এই ঘরে বসত করেন বিভিন্ন ধর্মের, কর্মের ও পেশার নারী-পুরুষ এবং বিভিন্ন বয়সের। এই ঘর সাজানো-গুছানো ও জাতির উন্নয়ন ঘটানোর দায়িত্ব ও কর্তব্য তাদের। যারা দেশের উন্নয়ন ও জাতিকে দেখভাল করার অঙ্গীকার করে নির্বাচিত হন এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুখে মুখে দেখভাল করার কথা বলা নয়, জাতি বাস্তবে দেখভাল করার প্রতিনিধি চায়। যে প্রতিনিধি জাতি স্বাধীনের পর থেকে পায় নাই। ভোগী নয়, আমাদেরকে ত্যাগী বীরের পরিচয় দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে নীতি ও আদর্শের আলোকে কাজের মাধ্যমে। ত্যাগের ফসল কবরে ভোগ করার সুযোগ অনন্তকাল পাওয়া যাবে, কিন্তু এখানের মতো সেখানে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যাবে না। আধারে পতিত পৃথিবীতে আলো ছড়ানোর দায়িত্ব দিয়ে শেষে প্রেরিত নায়ক-মহানায়ক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে মানবজাতির উভয় পারের মঙ্গলের জন্য প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দান করে দুনিয়ার বুকে পাঠিয়েছিলেন এবং তিনি পূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে আলোকিত পথে ধাবিত করে ছিলেন। তিনি সুপথ দেখিয়েছেন ও কাজ করে কাজ করা শিখিয়েছেন। আমরা সেই আলোকিত সুপথে এবং সুতা পরিমাণ কাজের মাঝেও নেই। যার ফলে শান্তি নেই, আর কোন খানা-খাদ্যেও স্বাদ ও পুষ্টি নেই। মানুষের মাঝে আয়-বরকত, মায়া-মমতা ও রহমত নেই এবং কর্মের ফলে উঠে গেছে। এগুলো ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব তাদের যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তা না হলে আধারেই ডুবে মরতে হবে এবং ব্যর্থতার দায় রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দকেই নিতে হবে ও পরপারে জবাব দিতে হবে। সুতরাং ভালো দিকগুলো বেছে বেছে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং জাতির গ্রহণযোগ্যতায় যেতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একাধিক পরীক্ষায় পাশ করে বিজয় ও নির্মাণ অর্জন করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply