শিশুর অতিরিক্ত জেদ বা রাগ প্রত্যেক অভিভাবকের জন্য ভীষণ চিন্তার বিষয়। শিশুদের জেদমুক্ত করতে বা অতিরিক্ত রাগ থেকে রক্ষা করতে তাদের প্রতি ইতিবাচক ও যত্নশীল হওয়া জরুরি।
মূলত বিষন্নতা, ক্লান্তি, একঘেয়েমি ও অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে শিশুরা জেদি বা অতিরিক্ত রাগী হয়। পারিপার্শ্বিকতা ও বংশগত জেনেটিক কারণেও তারা জেদি হয়। এ ছাড়াও মাদকাসক্ত পিতা মাতার কারণেও শিশু জেদি আচরণ করে থাকে।
কিভাবে বুঝবেন?
কারো সন্তান অতিরিক্ত জেদি বা রাগী হয়ে যাচ্ছে কি না এটা বোঝা যায় কিছু লক্ষণ দেখে।
যেমনঃ শিশুটি কোনো কারণে রেগে গেলেই সবার সঙ্গে, বিশেষ করে অভিভাবকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে ও মারামারিসহ গায়ে হাত তুলে।
সাধারণ কারণে বা অল্পতেই রেগে যায় এবং আশপাশের জিনিসপত্র অথবা হাতে যা থাকে তাই ভাঙচুর করে।
সহপাঠী বা খেলার সঙ্গীদের সঙ্গে মারামারি করে, তাদের মারধর করে।
অন্য শিশুরা বদমেজাজি শিশুদের সঙ্গে মিশতে চায় না।
খুব রেগে গেলে অনেক সময় নিজেই নিজেকে আঘাত করে ইত্যাদি।
করণীয়ঃ
আপনার শিশু কখনো রেগে গেলে নিজেকে শান্ত রাখুন। এতে নিজ থেকেই সে শান্ত হবে বা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
শিশু রেগে গেলে বা জেদ করলে তাকে জড়িয়ে ধরুন, আদর করুন, কোলে নিন। দেখবেন ম্যাজিকের মতো কাজ হবে এবং শিশুর রাগ তাৎক্ষণিক কমে যাবে।
শিশু কী বলতে চায় তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তার ভালো কাজের প্রশংসা করুন।
পড়ালেখার পাশাপাশি ধর্মীয় আচরণ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নিয়ম শেখান।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিশুদের হাতে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস দিবেন না। বেশিক্ষণ সেলফোন (মোবাইল ফোন) বা ট্যাবে দিবেন না। সেদিকে খেয়াল রাখুন। ঘুমনো বা খাওয়ার সময় মোবাইল ফোন, টিভি বা ট্যাব না দেওয়ার বা না দেখার জন্য অভ্যস্ত করুন।
তাদের নিয়মিত খেলতে উৎসাহ দিন। নিজেও শিশুর সঙ্গে খেলাধুলা করুন, তাদের কোচ হোন।
শিশুটি জেদ করে কোনো কিছু দাবি করলে তাকে বুঝিয়ে বলুন যে এভাবে জেদ করে নয়, বরং ভালোভাবে চাইতে হয়। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে সে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
শিশুকে সব সময় বকাঝকা বা তিরস্কার করবেন না। এতে সে আরো খিটখিটে স্বভাবের হয়।
শিশুর সামনে তার জেদ নিয়ে অন্য কারোর কাছে গল্প করবেন না।
তাদের সঙ্গে চিৎকার করে কখনোই কথা বলবেন না। তাদের সামনে কখনোই ঝগড়াবিবাদ করবেন না।
শিশুদের কোনো সময় চড়-থাপ্পড় মারবেন না, উসকানিমূলক কথা বলবেন না, অথবা একই কথার পুনরাবৃত্তি করবেন না। প্রয়োজনে হালকা শাসন করুন।
ভালো কাজ করতে উৎসাহ দিন; ভালো কাজ করলে পুরস্কৃত করুন। অন্যদের সঙ্গে তুলনা করবেন না।
সব সময় নিজের সিদ্ধান্ত চাপাবেন না, মিথ্যা কথা তাদের সঙ্গে বলবেন না।
তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। ভালো ইচ্ছাগুলো পূরণ করুন। বুঝতে দিন তারা আপনার কাছে অনেক মূল্যবান।
অহেতুক ভুলত্রুটি ধরবেন না।
শিশুর সঙ্গে কথা বলে তার দৈনন্দিন কাজের একটা রুটিন তৈরি করুন। সে কখন খেলবে, কখন পড়বে, কখন স্বাস্থ্যসেবা বিধিমালা শিখবে, কখন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শিখবে ইত্যাদি যেন উল্লেখ থাকে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply