ঋতম্ভরা বন্দোপাধ্যায়, কলকাতা প্রতিনিধি: আজ ৫ জুন। বিশ্ব পরিবেশ দিবস। সারা বিশ্ব জুড়ে উষ্ণ আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শুধু পরিবেশ উত্তপ্ত ই হচ্ছেনা, প্রচণ্ড পানীয় জলের অভাব দেখা গিয়েছে বহু দেশে। বেশ কিছু দেশে পানীয় জলের অভাবে হাহাকার উঠেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘ তাই আবার পরিবেশ রক্ষাকল্পে আহবান জানিয়েছে,”একটি গাছ একটি প্রান” প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য।
বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি অনুসারে আজ সারাবিশ্বেই গাছ লাগানোর কাজ চলছে। ভারতেও আজ সকালে প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেশ কয়েকজন নিয়ে বৃক্ষ রোপন করলেন। কেন এই কর্মসূচি ও পরিবেশ দিবস?
৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ । ১৯৭২ সাল থেকে এই দিনটিকে উদযাপন করা হয়। সারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত ভারতে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। চলতি বছর যেভাবে সারা বিশ্বে তাপপ্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, তাতে পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব অনেকটাই। ভারতের প্রতিটি রাজ্যে পালিত হচ্ছে পরিবেশ দিবস। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা নিজে গাছ লাগিয়ে অপরকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করেছেন। উষ্ণায়ণ কমাতে মুখে পদক্ষেপের কথা বলা হলেও বাস্তবে কতটা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।
কেন পরিবেশ নিয়ে ভাবতে হয়েছিল রাষ্ট্রসংঘ কে? সুইডেন হলো এর পথ প্রদর্শক।
১৯৬৮ সালের ২০ মে রাষ্ট্রসঙ্ঘের অর্থনীতি এবং সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল সুইডেন সরকার। চিঠির বিষয়বস্তু ছিল প্রকৃতি এবং পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে তাদের গভীর উদ্বেগের কথা। সে বছরই রাষ্ট্রসঙ্ঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। পরের বছর রাষ্ট্রসঙ্ঘের (United Nations) পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষায় বিস্তারিত আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজতে বলা হয়। তখনই সদস্য দেশগুলির সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫ জুন শুরু হয়েছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন। এই সম্মেলন চলেছিল ১৬ জুন পর্যন্ত। এই সম্মেলন রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রথম পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের স্বীকৃতি পায়। পরে ১৯৭৩ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুনকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে। পরিবেশ দিবসের কর্মসূচি
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে একদিকে। হিমবাহ গলছে, অন্যদিকে বাড়ছে সমুদ্রের জলস্তর। বহু জায়গায় ভূগর্ভস্থ জল শুকিয়ে আসছে। পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে ভারতের বিভিন্ন শহরে। আগামী কয়েক দশকে পৃথিবীর বহু অঞ্চল জলশূন্য হয়ে পড়বে এই আশঙ্কা রয়েছে। এমনিতেই সারা বিশ্বে সমুদ্রে জলের প্রচুর ভান্ডার রয়েছে, কিন্তু সেটা পানীয় নয়। পানীয় জলের ভান্ডার সীমিত। শহর, নগর,বন্দরের রূপায়ণে বহু গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু সেভাবে তার অভাব পূরণ করা হচ্ছে না। ফলে শহর গড়ে ওঠায় গাছের অভাব মেটাতে গাছ কাটার পর কম করেও সমপরিমাণ অথবা বেশি বৃক্ষ রোপনের কথা বলা হয়েছে।
অন্যদিকে বন জঙ্গলে আগুন লেগেই চলেছে। এই যে বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে। বায়ুদূষণ, জলদূষণের পাশাপাশি নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে প্লাস্টিকের দূষণ। সমুদ্রের তলদেশে তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিকের পাহাড়। বাসযোগ্য ভূমির মধ্যেও ঢুকে পড়ছে ক্ষতিকারক প্লাস্টিক। শুধু মানবদেহে নয়, অন্যান্য প্রাণীদের দেহেও মিলছে প্লাস্টিকের টুকরো। পৃথিবীর বুক থেকে বহু প্রজাতি অস্তিত্ব সঙ্কটের সম্মুখীন হলেও তা নিয়ে আমরা উদাসীন। এমতাবস্থায় পৃথিবীর জৈব বৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে গেলে তার প্রভাব মানুষের উপরেও পড়বে। যেভাবে পৃথিবী ধীরে ধীরে বাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে, তাতে একদিন মানব সভ্যতাও হুমকির মুখে পড়বেই। তা রুখতে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকারের দিন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ভারত সরকার গাছ কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। উন্নয়ের প্রয়োজনে যদি গাছ কাটার প্রয়োজন হয় তাহলে সমপরিমাণ অথবা দ্বিগুণ গাছ লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply