মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, দিল্লি, ভারত: তাই প্রতিটি নির্বাচনেই সারা বিশ্বের নজর ভারতের দিকে। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই বিশাল দেশের গণতন্ত্র এখন প্রহসনে পরিণত হতে চলেছে। নির্বাচনে দুর্নীতি একটা মহামারী আকারে প্রকাশ পাচ্ছে। সারা ভারতে যদিও বিনাবাধায় সুষ্ঠু নির্বাচন হয়ে এসেছে অতীতে, কিন্তু কয়েক দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গ, কাশ্মীর, বিহার, ছত্তিশগড়, উত্তর প্রদেশে এই গণতন্ত্র একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। সামান্য সমবায় নির্বাচন,পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে বিধানসভা,লোকসভা নির্বাচন এই রাজ্যগুলিতে বিভীষিকা হয়ে দেখা দিয়েছে। নির্বাচনে প্রতিযোগিতা তো দূরের কথা অনেক ক্ষেত্রেই বিরোধীদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতেও দেওয়া হয়নি। কার্যত অনেক জায়গায় ভোট হয়ই না। জনতার মৌলিক অধিকারকে কবর দেওয়া হয়। কার ভোট কে দিয়ে যায়, সেটা বোঝা মুশকিল। গণতন্ত্রের গলা টিপে বুথ লুট, এটিএম ব্যালট বক্স লুট,,বোমা বিস্ফোরণ, ভোটারদের ভয় দেখিয়ে বুথে আসতে না দেওয়া, পোলিং এজেন্ট,পোলিং অফিসারদের অপহরণ, মারধর করে বের করে দেওয়া,ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা, ব্যালট বাক্স তুলে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়া, ইচ্ছেমত ছাপ্পা ভোট দেওয়া আখছার ঘটে । বিভিন্ন রাজ্য সরকারের পুলিস বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে শাসকদল ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য অবাধ লুট চালায়। বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোর মতো কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হলেও সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ না করতে তাদের নির্বাচন কেন্দ্রের পরিসর থেকে দূরে রাখা হয়।প্রকাশ্যে বুথের সামনে শাসক এবং বিরোধীদের মধ্যে বচসা,হাতাহাতি, মারপিট হলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী ঠুঁটো জগন্নাথ। চুপ করে থাকে।ফলে গণতন্ত্রের প্রহসন চলতেই থাকে। রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় যে দলই থাকুক না কেন তারা এটির সুযোগ নিয়ে থাকে। এবারের সাধারণ নির্বাচনএবারের নির্বাচনে এই কটি রাজ্য ছাড়া সারা দেশে বাকি রাজ্য গুলিতে নির্বিঘ্নে ভোট হয়েছে। কোথাও কারো গায়ে একটি আঁচড় পর্যন্ত লাগেনি। কিন্তু সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা হলো এবারের ভোট ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িকতার কার্ড খেলা হয়েছে। হিন্দু ভোট,মুসলীম ভোট, দলিত ভোট, কিষান ভোটের কার্ড খেলে গণতন্ত্রের দফারফা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত: গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিয়েছে “ঘুষ” এর প্রতিযোগিতা। আম আদমি পার্টি যেমন বিনামূল্যে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ, মহিলাদের বিনামূল্যে সরকারি বাসে সফর, এবং বিনামূল্যে জল সরবরাহের কথা ঘোষণা করেছে,সেখানে ভারতীয় জনতা পার্টি কিষান বীমা, শস্য বীমা, পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা, মহিলাদের ব্যাংক খাতায় মাসে ৩ হাজার টাকা জমা ও বৃদ্ধ বয়সে পেনসানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেছে। ধর্মকে সামনে এগিয়ে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ ইত্যাদি প্রচার করেছে।তৃনমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রতি পরিবারের মহিলাদের মাসে মাসে ১ হাজার টাকার লক্ষ্মী ভান্ডার, দুঃস্থ মেয়েদের বিয়ের জন্য ২৫ হাজার টাকার কন্যাশ্রী, বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য সাথী ইত্যাদি প্রচার করেছে। মুসলিমদের জন্য এবারেও বহু সুবিধার কথা বলা হয়েছে।কংগ্রেস বসে নেই। তারাও প্রতি পরিবারে মহিলাদের মাসে ৫ হাজার টাকা, বেকারদের পেনসন, বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার উপাহার দেওয়ার লোভ দেখিয়েছে।
এর অর্থ একটাই, সংবিধানে দেওয়া মৌলিক অধিকারকে ধুলিস্যাৎ করে টাকা এবং সম্পদের লোভ দেখিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনকে প্রভাবিত করে অপছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। ভোটারদের আসলে ভিখারীর পর্যায়ে ফেলা হয়েছে।এই প্রবণতা আর যাই হোক প্রকৃত গণতন্ত্র নয়। ক্রমশ:
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply