September 8, 2024, 2:41 am

তথ্য ও সংবাদ শিরোনামঃ
জাতীয় সঙ্গীত নয়, অর্থনীতি নিয়ে ভাবনার আহবান নতুনধারার ছাত্রজনতার উপর গুলিবর্ষণকারী অয়ন ওসমানের দোসর যমজ ভাই রাজিব সজিব এখনও অধরা বেনাপোল সীমান্তে বিজিবির পৃথক অভিযানে এলএসডি ও ফেনসিডিলসহ আটক ১জন সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখএর ৫৩তম শাহাদাত বার্ষিকী পালিত হয়েছে। চলমান সহিংসতা, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক অভিযোগ ও চাকুরীচ্যুত ভালুকায় ইন্টারনেট সেবার মালামাল লুট, থানায় অভিযোগ আসন্ন দুর্গা পুজায় সেনাবাহিনী মোতায়নের সিদ্ধান্তে অভিনন্দন জানিয়েছেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) সারাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের প্রতিবাদ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিতে সনাতন অধিকার সুরক্ষা পরিষদ এর উদ্যেগে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টনের বিষয়টি অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হতে হবে। -প্রধান উপদেষ্টা মহাভারতের চিত্রনাট্য রূপ দিয়েছিলেন উর্দু কবি রাহী মাসুম রেজা। শেখ হাসিনা সরকারের সময় রিজার্ভ শূন্যের কোটায় নেমে এসেছিল, কথাটি সত্য নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ভারতে বসে দেশ সম্পর্কে হাসিনার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতিকে অবন্ধুসুলভ আচরণ বলে বর্ণনা করেন ড. ইউনূস। অন্তত এই সরকারের সময়ে সাবধানে চলেন, সিন্ডিকেট করার চেষ্টা করবেন না। বেনাপোল রেলপথ দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি শুরু। যশোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ মতবিনিময় সভা। বন্যার্তদের পুনর্বাসন ফান্ডে শিক্ষকদের ১ দিনের বেতন প্রদানের আহবান নারায়ণগঞ্জ জেলা বেফাকের বেনাপোল স্থলবন্দরের দুই উপপরিচালকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারে বরখাস্ত। বেনাপোল চেকপোস্টে যাত্রীদের টাকা ছিনতাই, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সিলগালা। বেনাপোল পাসপোর্টধারীদের সাথে প্রতারনায় অভিযুক্ত ৮ টি অবৈধ দোকানে তালা অনলাইন ক্যাসিনোর মাস্টার এজেন্ট মোরশেদ আলম লিপুর বাগানবাড়িতে অভিযান সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যত্রতত্র মামলা দায়ের বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহের জন্য বুধবার রাত ১২টা থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু ডোনাল্ড লু চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় আসছেন। সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ন্যায়বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে আমেরিকা বাংলাদেশে একটি প্রসিকিউটোরিয়াল সার্ভিস স্থাপনে সহায়তা করার চেষ্টা করছে। -যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভ। বেনাপোল চেকপোস্টে ৮ জন ভারত গামী পাসপোর্ট যাত্রীর টাকা ছিনতাই। যশোর ভ্রাম্যমাণ নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগারের উদ্বোধন। যশোর সদর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান। বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি কম বেড়েছে রপ্তানি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ঋত্বিক ঘটক, উত্তম কুমার পথে পথে ভিক্ষা করেছিলেন

বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ঋত্বিক ঘটক, উত্তম কুমার পথে পথে ভিক্ষা করেছিলেন

ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা: প্রথমে ভাষা আন্দোলন দিয়ে স্বাধীনতার আঁতুড় ঘরের সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশে। তারপর থেকেই বাংলা বিরোধী পাকিস্তানি শাসক আপামর জনসাধারণের ওপর স্টিম রোলার চালাতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যখন তার আওয়ামি লিগ পার্টি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে তখন বাঙালিদের হাতে শাসন ক্ষমতা তুলে দিতে অস্বীকার করেছিল পাকিস্তান। গণতন্ত্রকে পদদলিত করে ব্যাপক হত্যা লীলা শুরু করে।

ভারতে তখন প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। কোটি কোটি বাঙালি পাকিস্তানের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে এপারে ভারতে চলে এলে পশ্চিমবঙ্গ,ত্রিপুরা, অসম সহ সারা ভারতের মানুষ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। খাদ্য,বাসস্থান ভাগ করে নিয়েছিলেন। সেই কারনে ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। যুদ্ধ যখন মধ্যগগনে তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবিতে সারা পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উঠেছিল উত্তাল। সেটা সকলেই জানেন।

কিন্তু বাংলার সিনেমা জগতের অবদান অনস্বীকার্য। জনগণের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহের সবচেয়ে সহজ উপায় ছিল চলচ্চিত্র জগতের নায়ক, মহানায়ক, পরিচালক দের উপস্থিতি। মহানায়ক উত্তম কুমার এক ঝাঁক অভিনেতা,অভিনেত্রীদের নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। তাকে দেখতে ভিড় জমে যাওয়া স্বাভাবিক। বৃষ্টির মতো টাকা পড়ছিল উত্তম কুমারের ঝুলিতে। শুধু তাই নয়, শুনলে অনেকেই অবাক হবেন, কলকাতার নিষিদ্ধ পল্লীতে পর্যন্ত উত্তম কুমার হাজির হলে যৌনকর্মীরা ছুটে এসে তাদের কাছে যা কিছু ছিল উদার হস্তে উত্তম কুমারের হাতে তুলে দিয়েছেন। মহানায়ক সেদিন সত্যিই কেঁদে ফেলেছিলেন। মহানায়ক উত্তম কুমার তার অর্থ সংগ্রহের কাজে দুয়েকবার আমার বাবাকেও ডেকে নিয়ে গেছেন।সেসময় বাবা মানস বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিত পার্ক সার্কাসে অস্থায়ী বাংলাদেশ মিশনে যেতেন শেখ কামাল, এম এন এ রুবেয়া আখতার ওরফে ডলি আখতার, আওয়ামী লীগের ঝাঁটু সাহার সঙ্গে দেখা করতে। উত্তম কুমার বাবার কাছ থেকে বাংলাদেশের সর্বশেষ খবর নিতেন।

আপনারা অনেকেই জানেন, বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকর নিজেও মুম্বাইতে চাঁদা চাইতেই এক কথায় সবাইকে চমকে দিয়ে কোটি টাকার ওপর একটি চেক লিখে দিয়েছিলেন। দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ভারতে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে দেখাও করেছেন। ঋত্বিক ঘটক তখন চিত্র পরিচালনায় গগনচুম্বী নামী পরিচালক। তিনি রাস্তায় নেমে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ধুতি,পাঞ্জাবি পড়ে মানুষের কাছে হাত পেতে কাতর আবেদন করেছেন।সেই কাহিনীও তুলে ধরছি এখানে। বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড থেকে শুরু করে সর্বত্র রাস্তায়, পার্কে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভিক্ষার হাত পেতে হাজির হয়েছিলেন।

ভিক্ষা করতে করতে ঋত্বিক হঠাৎ একটি গাড়িতে চড়ে সুচিত্রা দেবীকে চলতে দেখেন। ঋত্বিক ঘটকের বেশভূষা দেখে চেনা মুস্কিল ছিল। তিনি সুচিত্রা দেবীকে দেখেই বলেন, ” এলেই যখন, দুটো টাকা দিয়ে যাও’, বলে ঋত্বিক হাত বাড়ালেন। লজ্জায় মাথা নিচু করে সুচিত্রা বললেন ‘ছিঃ দাদা। এমন করে বলছেন কেন ? আমি কি দূরের কেউ ?’। বলেই কড়কড়া কয়েকটা ১০০টাকার নোট দিলেন ঋত্বিকের হাতে …সাদা রংয়ের একটা এ্যাম্বাসেডরের পিছের সিটে হেলান দিয়ে বসে আছেন সুচিত্রা। তীব্র দাবদাহ, পুরা কলকাতা পুড়ছে। এ্যাম্বাসেডর পার্ক স্ট্রিটে ঢুকে একটু আগাতেই ফুটপাতে একজনকে দেখে সোজা হয়ে সিটে বসলেন সুচিত্রা। ড্রাইভারকে গাড়ি সাইড করতে বলে নিজেই নেমে এগিয়ে গেলেন সেই মানুষটার দিকে। এই কাঠফাটা গরমে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছেন স্বয়ং ঋত্বিক ঘটক।  হাত জোর করে প্রণাম করতে করতে সুচিত্রা বললেন, – আমাকে চিনতে পারছেন না ঋত্বিক দা ? আমি সুচিত্রা, গত বছর শান্তিনিকেতনে দেখা হলো। চশমার উপর দিকে তাকিয়ে ভালো করে মুখটা দেখলেন ঋত্বিক, তারপরে বললেনঃ– ও হ্যা। তুমি সুচিত্রা রায় তো ? টালিগঞ্জ বাড়ি। অন্নদাশঙ্কর রায় তোমার কী রকম জ্যাঠা হন না ? ঠিক বলেছি তো ?সুচিত্রা আপ্লুত হলেন। কি সৌভাগ্য! এত বড় মানুষটা সব মনে রেখেছে। সুচিত্রা কলকাতার শিল্পপ্রেমী বনেদি পরিবারের মেয়ে, জন্মের পর থেকেই কলকাতার সব মহিরুহদের সামনে দেখে বড় হয়েছেন; ইদানিং প্রায়ই বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় চলচ্চিত্র বিষয়ে প্রবন্ধনিবন্ধ লেখেন। ঋত্বিক ঘটক এর মূল্য তিনি বোঝেন। ঋত্বিক ঘটক কে মনে মনে গুরু মানেন সুচিত্রা। ঋত্বিকদার পরনে ধুলিমলিন পাজামা-পাঞ্জাবি। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। এক মাথা এলোমেলো চুল। মুখে খোঁচা খোঁচা। সে মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম।এই জবুথবু অবস্থাতেও ঋত্বিকের চোখের আগুন একফোটা কমে নি, ঋত্বিক ঘটক মানেই এক আগুনের নাম। মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার, সুবর্ণরেখা-এসব ছবিগুলোয় যে আগুনের ছাপ স্পষ্ট।

সুচিত্রা খেয়াল করলেন ঋত্বিকের পিছনে একটা ব্যানারে বড় করে লেখা :  “বাংলা দেশের শরণার্থীদের জন্য দান করুন।”। ব্যানারের পাশেই একটা বড় বাক্স, সেখানে রাস্তার মানুষ টাকা ফেলে যাচ্ছে। বাক্সের পাশেই লম্বা একটি টুল। তার ওপর গিটার হাতে এক বিদেশি তরুণ বসে আছে। গায়ের রং তামাটে, হিপিদের মতো লম্বাচুল, চোখে সানগ্লাস আর মুখ ভর্তি লালচে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। পরনে ঢোলা বেলবটম প্যান্ট আর রঙ্গিন হাওয়াই শার্ট। মাথায় একটি সাদা রঙের সোলার হ্যাট। গিটার আর মাউথ অর্গান বাজিয়ে নাকি গলায় তরুণটি গাইছে:”Come senators, congressmen Please heed the callDon’t stand in the doorwayDon’t block up the hall”গানটা সুচিত্রার পরিচিত, কিংবদন্তি গায়ক বব ডিলানের গান। ঋত্বিক তরুণকে দেখিয়ে বললেন, ও হল স্টিভ টার্নার। গায়ক ও সাংবাদিক। সপ্তাহ খানেক হল আমেরিকা থেকে এসেছে। স্টিভ-এর সঙ্গে কবি অ্যালান গিনসবার্গও কলকাতা এসেছেন। স্টিভকে হ্যালো বলে কৌতুহলী সুচিত্রা জানতে চাইলেন গিনসবার্গ কোথায়। ঋত্বিক বললেন,অ্যালান আজ সকালে শক্তির সঙ্গে বারাসাত শরনার্থী শিবিরে গিয়েছে। – শক্তি ? মানে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ?  – হ্যা। গতকাল অবধি টাকাপয়সা যা জমেছিল তা দিয়ে ওরা ওষুধ আর খাবার কিনে নিয়ে এলো।  হঠাৎ করে ঋত্বিক সুচিত্রাকে প্রশ্ন করলেনঃ– সুচিত্রা তুমি একসঙ্গে কত লাশ দেখেছ ? ১০০? ২০০? ৩০০? ৪০০? ৫০০? ৬০০? ৭০০? ৮০০? ৯০০? লাখ লাখ, বিশ লাখ? সুচিত্রা চোখ ছানাবড়া। ঘোরলাগা নিয়ে সুচিত্রা আবার এ্যাম্বাসেডরে চড়ে বসলেন। যে ভূখন্ডের অসহায় মানুষের জন্য এই পাগলাটে মানুষটা তীব্র তাপদাহে পুড়েছেন, কেঁদেছেন,চিৎকার করেছেন সেই ভূখন্ডে তো ঋত্বিকদা আর কখনোই ফিরে যাবেন না জেনেও।

ঋত্বিকদারা পরিবারসহ ’৪৭ সালেই এ পাড়ে চলে এসেছেন । তার আসল মাটি ছিল ওপার বাংলায়। তবুও … এত বড় ফিল্ম ডিরেক্টর, ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়, যে ঋত্বিক ঘটককে জগদ্বিখ্যাত চলচ্চিত্রকারদের সঙ্গে তুলনা করা হয় সে মানুষটি কেমন নাওয়াখাওয়া ভুলে জ্বলন্ত ফুটপাতে দাঁড়িয়ে তৎকালীন পূর্ব বাংলার শরণার্থীদের জন্য ভিক্ষে করছেন। এমন অনেকেই রয়েছেন। বাবার মুখে শুনেছি টালিগঞ্জে স্টুডিও পাড়ায় তখন আলোচনার বিষয়বস্তুই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতীয় সেনার দুর্বার অভিযান পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে। যুদ্ধে মুক্তি যোদ্ধাদের মরণপণ যুদ্ধও তখন ছিল আলোচনার বিষয়।ভাবতে পারেন, কলকাতার সোনাগাছির যৌন কর্মীরাও বিনা স্বার্থেই তাদের একেক দিনের সম্বল উজাড় করে মহানায়ক উত্তম কুমারের হাতে তুলে দিয়েছেন। জয় বাংলা।

আমাদের প্রকাশিত তথ্য ও সংবাদ আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)

Design by Raytahost.com