ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়
ভারতে এখন নতুন উদ্যমে প্রতিযোগীতা মূলক কর্মযজ্ঞ চলছে। উত্তর পূর্বের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর এশিয়ার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ ভারতে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের দীর্ঘতম স্ট্যাচু, চারতলা বৃহৎ রেল, মেট্রোর সঙ্গে সঙ্গেই ইতিমধ্যেই পথচলা শুরু করে দিয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম প্রাইভেট মাল্টি-স্পেশালিটি অমৃতা হাসপাতাল । এই হাসপাতাল আধ্যাত্মিক নেত্রী অমৃতানন্দময়ী দেবী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যিনি সকলের কাছে “আম্মা” নামে সমধিক পরিচিত। ফরিদাবাদে ১৩০ একর জমির ওপর অবস্থিত এই হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার খরচ হয়েছে। ইতিমধ্যেই গত দু বছর আগে ২৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২,৬০০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। প্রায় ১ কোটি বর্গফুট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ওই এলাকায় একটি বড় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ছাড়াও একটি ফোর-স্টার হোটেল, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, অ্যালাইড হেলথ সায়েন্সের কলেজ, পুনর্বাসন কেন্দ্র, হেলিপ্যাডের পাশাপাশি রোগীদের এবং রোগীদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ৪৯৮ টি রুমবিশিষ্ট গেস্টহাউসের সুবিধাও থাকবে। পাশাপাশি, এই বিস্তীর্ণ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার সাথে সাথে আপনাকে “নমঃ শিবায়” মন্ত্র দ্বারা অভ্যর্থনা জানানো হবে। উল্লেখ্য যে, কেরালার কোচির অমৃতা হাসপাতাল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে। হাসপাতালটি প্রথম পর্যায়ে ৫০০ টি শয্যা এবং পরবর্তী ১৮ মাসের মধ্যে ৭৫০ টি শয্যা চালু করার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে। এছাড়াও, ২০২৭-২৯ সালের মধ্যে এখানে ২,৬০০ টি শয্যা শুরু করা হবে।
এই প্রসঙ্গে হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, মোট ১২ হাজার জনেরও বেশি কর্মী এবং ৭০০ জন ডাক্তার এই হাসপাতালে পরিষেবা দেবেন। পাশাপাশি নতুন এই হাসপাতালের ধারণাটি অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। ম্যানেজমেন্ট পরিকল্পনা করেছে ডাক্তার এবং কর্মীরা। কর্মীদের স্থূলতা রুখতে তাঁরা যাতে লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ির ব্যবহার করেন সেজন্য তাঁদের উৎসাহপ্রদান করা হবে। এছাড়াও জানিয়ে রাখি যে, কোচির অমৃতা হাসপাতাল, ২০১৫ সালে ৩০ বছর বয়সী রোগী মনু টিআর-এর হাত প্রতিস্থাপন করে ভারতের চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইতিহাস তৈরি করেছিল।
রোগীদের জন্য রয়েছে এইসব ব্যবস্থা: এই হাসপাতালে শিশুদের জন্য মোট ৩০০ টি শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে, পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডটি সবচেয়ে বড়। এরপরে, প্রসবের জন্য সর্বাধিক শয্যা রাখা হয়েছে। ওই হাসপাতালে ৮১ টি বিভিন্ন মেডিকেল স্পেশালিটির চিকিৎসা থাকবে। এছাড়াও, হাসপাতালে ৬৪ টি অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত করা হয়েছে। ক্রিটিক্যাল কেয়ারের জন্য থাকছে ৫৪৩ টি বেড। পাশাপাশি, আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের কক্ষ অর্থাৎ ক্রিটিক্যাল কেয়ারটি কাঁচের দরজা দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। যাতে রোগীকে বাইরে থেকেও সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা যায়। সর্বোপরি, গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে প্রতি দু’জন রোগীর জন্য একজন হেলথ কেয়ার কর্মীর ওয়ার্ক স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য পরিষেবায় ২৫ বছর:
মাতা অমৃতানন্দময়ী দেবী দ্বারা ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত, অমৃতা হাসপাতাল স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী অবদান রেখেছে। অমৃতা হাসপাতাল তার দাতব্য চিকিৎসা যত্নের জন্যও পরিচিত। যা এখনও পর্যন্ত ৪৩.৩ লক্ষেরও বেশি রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে। যাতে মোট ৬০০ কোটিরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে। ২০১৬ সালে, অমৃতা হাসপাতালকে রোগীদের নিরাপত্তা এবং চিকিৎসা উদ্ভাবনের জন্য এফ্ আই সি সি আই দ্বারা “স্বাস্থ্য পরিচর্যা শ্রেষ্ঠত্ব পুরস্কার” দেওয়া হয়। গত ২৫ বছরে সামনে আসা সুনামি, কবিড ১৯ একাধিক ভূমিকম্প এবং অন্যান্য বড় দুর্যোগের কঠিন সময়ে সবাইকে সাহায্য করার লক্ষ্যেও অমৃতা হাসপাতাল এগিয়ে ছিল। এমতাবস্থায়, ফরিদাবাদে এই হাসপাতালর নতুন শাখাটি হল এশিয়ার বৃহত্তম সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতাল।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply