November 21, 2024, 1:43 pm

তথ্য ও সংবাদ শিরোনামঃ
বেনাপোল ধান্যখোলা সীমান্তে ৩৬ কেজি গাঁজাসহ ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার। টঙ্গীবাড়ীতে বীজ আলু ও সার ব্যাবসায়ী দের সাথে ইউএনওর মত বিনিময় সভা। বেনাপোল দিয়ে ভারতে পাচার হওয়া ২৪ জন কিশোর ও কিশোরী দেশে ফিরেছে। আ.লীগ নেতার জবর দখলে থাকা সরকারি ১২ বিঘা জমি উদ্ধার। রাজধানীতে কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ। ১৫ বোতল ফেন্সিডিল সহ ০১ জন আসামী গ্রেফতার। যশোর পর্যটন খাতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হবে। উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বেনাপোল বন্দর দিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু। বেনাপোলের শহীদ আব্দুল্লাহর কবর জিয়ারত করলেন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনের রূপরেখা না থাকায় আশাহত হয়েছে বিএনপি। ভালুকায় দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিং ধনবাড়ী উপজেলার নব নিযুক্ত নির্বাহী অফিসারের সাথে ধনবাড়ী উপজেলা মডেল প্রেসক্লাবের সদস্যদের সৌজন্য সাক্ষাৎ। নওগাঁ পত্নীতলার ডিগ্রি চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সুমন হোসেন কে হত্যা করে গলায় ফাঁসি দিয়ে কাঁঠাল গাছের ঝুলিয়ে রহস্য জনক মৃত্যু। শার্শায় ৪ যুগ ধরে খবরের কাগজের ফেরিওয়ালা সিরাজ আর নেই। রাজনৈতিক গুরু হিসেবে মওলানা ভাসানীকে স্বীকৃতি দিতে হবে …… অধ্যক্ষ এম শরিফুল ইসলাম বেনাপোল হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন ৯২৫ এর বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত। যশোর যৌনকর্মী প্রেমিকাকে নিয়ে দ্বন্ধে হেলপার বাপ্পি খুন। মওলানা ভাসানীকে অপমান করায় আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত প্রায় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংস্কার চাই – রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী। ভালুকায় জমি দখল ও খেতের ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ মওলানা ভাসানীকে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি …. বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিস। দেশপ্রেমিক লোকদের সঠিক প্রক্রিয়ায় যাচাই বাছাই করে নিয়োগ দিতে হবে …… অধ্যাপক ড. সায়েদা ওবায়েদ যশোর বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের কর্তৃক ৩০ বোতল ফেন্সিডিল ও ১ কেজি গাঁজা সহ ০১ জন আটক। ওষুধের দাম কমানোর আহ্বান ……এম এ আলীম সরকার গাজীপুর কোনাবাড়ীতে আবাসিক হোটেলে চলছে নারী ও মাদকের রমরমা ব্যবসা যশোর যাত্রীবাহী বাসের ভেতর থেকে রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ঢাকাই সিনেমার একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক রুবেল। কোটায় চাকরিপ্রাপ্তদের তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। গলি থেকে রাজপথ শ্যামবাজারের রক থেকে উঠে প্রাসাদে মিঠুন চক্রবর্তী

প্রণব মুখার্জি অনেক জানা অজানা কাহিনী

প্রণব মুখার্জি অনেক জানা অজানা কাহিনী

মানস বন্দ্যোপাধ্যায়নতুন দিল্লি১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়, তখন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জার্মানিতে ছিলেন। নিরাপত্তার কারণে ভারতের তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাদের লন্ডন হয়ে ভারতে নিয়ে আসেন। ইন্দিরা গান্ধী তার বিশ্বস্ত মন্ত্রী প্রণব মুখার্জি কে ডেকে আলোচনা করেন এবং শেখ হাসিনা ও রেহানার সম্পূর্ণ দায়িত্ব তুলে দেন ।  প্রনাবদার স্ত্রী শুভ্রা বৌদি সবসময় তাদের খেয়াল রাখতেন। এক সময় তারা প্রণবদার পরিবারের একান্ত আপনজন হয়ে ওঠেন। শেখ হাসিনা ও রেহানার কখন কী প্রয়োজন শুভ্রা বৌদি সবসময় নজরে রেখেছেন। নিজের বোনের মতো যত্ন করেছেন।প্রতিদিন ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার খোঁজ খবর নিতেন। শেখ হাসিনা ও রেহানা প্রণব দার পরিবারের সদস্য হয়ে উঠেছিলেন। হাসিনা প্রণব দাকে “দাদা” সম্বোধন করতেন।২০০৮ সালে দুই তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা নিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী হন। তখন তিনি তার দাদা প্রণব মুখার্জি কে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মুক্তি যুদ্ধে তার অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

২০১৩ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য,যখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী হন, তখন নিয়মিত তাকে বাংলাদেশ বিমান যোগে ঢাকা থেকে পদ্মার ইলিশ মাছ পাঠাতেন। শুধু প্রনবদাই নন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেও হাসিনা ইলিশ মাছ পাঠিয়েছেন।

প্রণবদার শ্বশুর বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইলে। রাষ্ট্র পতি হবার পর শুভ্রা বৌদিকে নিয়ে প্রনবদা শ্বশুর বাড়িতে গেলে তাকে নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায়। পুরো জেলা মেতে উঠে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানানোর জন্য। উৎসবে মুখরিত হয়ে ওঠে সারা দেশ। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রনবদার সফরকে সার্থক করে তোলার ব্যাপক ব্যবস্থা করেছিলেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে প্রনাবদাকে শুধু ইলিশ মাছ ই পাঠাতেন না। রাখী পূর্ণিমাতে প্রতি বছর তার দাদার জন্য রাখী পাঠাতে ভুলতেন না।একবার নাকি ভারতে এসে প্রণব দাকে ভাই ফোঁটা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু বাংলাদেশের কট্টর পন্থী ,বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার বি এন পি, এবং জামাতের বিরোধিতায় সেটি সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনে এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন বাংলাদেশ গৃহমন্ত্রি দীপু মনি আমাকে জানিয়েছিলেন ভারতে এসে প্রথমেই প্রণব দার সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীপু মনি তাই দিল্লি এসেই প্রণব মুখার্জি এবং তার স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেদিন ইলিশ মাছ দিয়ে লাউ ঘন্ট,রুই মাছের কালিয়া ও ইলিশ মাছ ভাঁপে রান্না করে শুভ্রা বৌদি তাকে আপ্যায়ন করেছিলেন।এর পর আরো একটু অনুষ্ঠানে আমার দেখা হয়েছিল প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে  দিল্লিতে। এই সাক্ষাৎকারের সুযোগ হয়েছিল তৎকালীন বাংলাদেশ হাই কমিশনে র প্রেস মিনিস্টার এনামুল হক চৌধুরীর সৌজন্যে। প্রেস মিনিস্টার এনামুল দার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেকটা পারিবারিক সম্পর্কের মতো। ভারতে এসেই সেদিন শেখ হাসিনা প্রথম প্রণব দাকে ফোন করেন। দাদাকে ফোনে কথা বলার সময় তার কুশল জিজ্ঞাসা করে তার সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন।  ভারতের প্রধান মন্ত্রী তখন ড: মনমোহন সিং। কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার সময় প্রণব দা ১০ জনপথে উপস্থিত ছিলেন। ভাই বোন তখন খুব খুশি খুশি ভাবে আত্মহারা। এমন মধুর সম্পর্ক ভাবা যায় না। যা দুই দেশের গণ্ডিতে আটকে রাখা যায় নি। তবুও আমরা আজ রেষারেষি করি ধর্মের ভিত্তিতে।বহুদিন আগের কথা, প্রণব মুখার্জি তখন মন্ত্রীত্ব হারিয়ে ঘরে বসে। তবে মন্ত্রী হবার কথা চলছে। প্রধান মন্ত্রী নরসিংহ রাও। গৃহমন্ত্রী রাজেশ পাইলট। তখন তান্ত্রিক গুরু চদ্র স্বামীর খুব বাড় বাড়ন্ত। দেশ,বিদেশে ছাড়িয়েছে নাম। আমেরিকা,ব্রিটেন, দুবাই, লিবিয়া, ব্রুনেই। ব্রুনেইর সুলতান তার নাম জপেন। আমি সেসময় বড়ো ল্যান্ড টাইমস পত্রিকার সম্পাদক। পত্রিকার মালিক ফুকণ বড়ো আমাকে নিয়ে গেলেন চন্দ্র স্বামীর আশ্রমে। বিশাল সেই আশ্রম Safdarjung development area  তে। ভিতরে ঢোকার গেটে কড়া তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ ।পরিচয় দেবার পর ওপর থেকে নেমে বিস্তীর্ণ বাগানের পথ দিয়ে এগিয়ে এলেন এক মোটা সোটা মানুষ। তার নাম রবীন রায়। গলায় মোটা সোনার চেন।তিনি আমাদের নিয়ে গেলেন ওপরে। ডাবের জল খাবার কিছুক্ষণের মধ্যে এলেন তান্ত্রিক গুরু চন্দ্র স্বামী।আমার সঙ্গে ছিলেন ফুকন বড়ো, আর অসমের এক স্কুলের মালিক বিজন রায়। চদ্র স্বামী বসলেন তার গদিতে। বিশাল বপু। পরিচয় পর্ব শেষ হতেই তিনি ফুকনকে অসমের ট্রাইবাল প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন। তখন বড়ো লিবারেশন টাইগার ( বি এল টি) ভারত বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠী। কথা প্রসঙ্গে বুঝতে পারলাম আন্ডার গ্রাউন্ড জঙ্গীদের সঙ্গে চন্দ্র স্বামীর যোগাযোগ রয়েছে। বিদেশ থেকে ফান্ড যোগাড় করেও দেন। আমাদের আলোচনা যখন তুঙ্গে তখন একটি ফোন বেজে উঠলো। কডলেস ফোন থেকে  রিসিভার নিয়ে এলেন এক অনুচর। বললেন প্রণব মুখার্জি রয়েছেন। চন্দ্র স্বামী ফোন ধরেই বললেন, সব ঠিক হায়। নর সিংহ জী কো বোল দিয়া। কাম হো জায়গা। যো কুছ মইনে বোলা, সম্ভাল কে রাখিয়ে। মেরা আদমি লে আয়েগা। ঠিক তার এক সপ্তাহ পরেই প্রণব দা অর্থ মন্ত্রী পদে নিযুক্ত হলেন।খানিক পরেই ঢুকলেন বুটা সিং লম্বা লোকটি ষষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন গুরুজীকে। পুরো দু মিনিট শুয়ে রইলেন। বোঝা গেল মন্ত্রীত্ব লাভের জন্য এসেছেন। উল্লেখযোগ্য, প্রধান মন্ত্রী নরসিংহ রাও বিশ্বস্ত শিষ্য ছিলেন চন্দ্র স্বামী র। মন্ত্রীত্ব পাবার বড় দরজা ছিল এই আশ্রম। কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে চন্দ্র স্বামী অনেককে মন্ত্রী বানিয়েছেন সে সময়।রাজিব গান্ধী যখন প্রধান মন্ত্রী ছিলেন ১৯৮৪এর পর তখন তিনি এই চন্দ্র স্বামীর সবকটি ডানা কেটে ফেলেছিলেন।। বেশির ভাগ সময় বিদেশে পালিয়ে থাকতে হয়ছিল তাকে। আশ্রমের সেই বৈভব শেষ। ভয়ে অনেকে আশ্রম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তার পর বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং ও চন্দ্র স্বামী কে কোণঠাসা করে রেখেছিলেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ সালে প্রণব মুখার্জি ক্ষমতার বাইরে ছিলেন। রাজিব গান্ধী তাকে কাছে আসতে দেন নি। ১৯৯১ সালে রাজিবের হত্যা কাণ্ডের পর প্রণব মুখার্জি আবার ফিরে এসেছিলেন ক্ষমতায় নর সিংহ রাও এর সময়ে।   সবচেয়ে বড় কথা, ড:মনমোহন সিং প্রধান মন্ত্রী হলেন প্রনবদা প্রথমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, তারপর বিদেশ মন্ত্রী এবং শেষে অর্থমন্ত্রী হিসাবে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছিলেন।  সেই সময়ে চন্দ্র স্বামীর অনুগত চামচা রবীন রায়কে দেখা গেছে প্রনাবদার বাস ভবনে। তাকে একটি বড় চেম্বার খুলে দিয়েছিলেন প্রনবদা নিজের বাসভবনে। কংগ্রেসের সদস্য করেও দিয়েছিলেন। ২৪ আকবর রোডে মিডিয়া কমিটির সদস্য করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিশেষ কারণে পরবর্তীকালে অজিত যোগী দায়িত্বে আসার পর রবিনকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। সে অনেক কথা। চেপে রাখতে হচ্ছে।প্রণব দার শেষ সরকারি বাসভবন রাজাজী মার্গে তার লাইব্রেরী ঘরে একটি মাত্র ফটো টাঙানো ছিল। সেটি প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর। তার সবচেয়ে প্রিয় নেত্রী কংগ্রেসের। ইন্দিরার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। ইন্দিরার আমলে প্রনাবদা অর্থ মন্ত্রী পদে নিযুক্ত ছিলেন। 

অসমের মঙ্গল দই থেকে এক মাছের ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রণব দার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। প্রণব দা কাউকেই নগণ্য মনে করতেন না। সেই ব্যবসায়ী প্রতি মাসে অসম থেকে বিমানযোগে প্রণব দাকে দুবার ১০ কিলো করে রুই মাছ পাঠাতেন। এতো মাছ কে খাবে? প্রণব দা বাসভবনের সকলের মধ্যে সেগুলি বিলি করতেন। তার সেই সময়ের তালকতোরা রোডের সরকারি বাস ভবনে আমার যাতায়াত ছিল ঘন ঘন। অসম থেকে প্রচুর বাঙালি সংগঠন দিল্লিতে এলেই আমার কাছে চলে আসতো। আমি তাদের নিয়ে কখনো প্রণব দা, কখনো সোনিয়া গান্ধীর কাছে যেতাম। কিন্তু দেখা হতেই প্রণব দার প্রথম শর্ত ছিল আলোচনায় যেন “বাঙালি” ইস্যু প্রধান না হয়ে ওঠে। তিনি বলতেন আমি ভারতের মন্ত্রী। কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের নই। বাঙালি বাঙালি করলে একটা ভুল বার্তা চলে যাবে।  এতে সংগঠনের বাঙালিরা ক্ষুব্ধ হতেন। তারা আমাকে বলতেন, বাঙালির লইগাই যদি কথা না হয়, তাইলে লাভ কী? কুনো কাম হইবো না। আমি বুঝতাম তাদের মনের কথা। তারা আসতেন অসমে তাদের ওপর অন্যায় ও অবিচারের প্রতিকার করতে। কিন্তু ফিরে গেছেন খালি হাতে।
অনেকদিন আগের কথা। আমি তখন হুমায়ূন পুর গ্রামে ( সফদর জং এনক্লেভ) থাকতাম। সামনেই সরোজিনী নগর। আমি সরোজিনী নগর বাজারে ঘোষ বাবুর মাছের দোকানে মাছ কিনতে যেতাম। সেখানে একদিন ঘোষ বাবু বলেন, সরোজিনী নগর পুলিশ স্টেশনের অধীন লক্ষী বাই নগরে পাড়ার ছেলেরা সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছিল সংলগ্ন ঝুগ্গী ঝুপড়ী র  খোলা জায়গায়। কিন্তু থানা থেকে এস এচ ও হরাচরণ সিং ভার্মা সরস্বতীর প্রতিমা তুলে নিয়ে গেছেন। চারটি ছেলেকে থানার লক আপে আটকে রেখেছে। পুজো করতে দেবেন না। তিনি আমাকে সাহায্য করতে বলেন। তার কথা শুনে আমি নির্দিষ্ট স্থানে তার সঙ্গে গেলে একজন বাউল মধুসূদনের সঙ্গে অনেকে এগিয়ে এলো। সকলকে নিয়ে আমি থানায় গেলাম। অফিসার সাংবাদিক শুনেও খুব একটা সহযোগিতা করলেন না। আমি ফোন করলাম প্রণব দাকে। প্রণব দা তখন মন্ত্রী। তিনি ফোন করলেন পুলিশের বড় কর্তা কে ডি পাল কে। প্রণব দা আমাকে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু আধা ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় নি। তার আগেই এস এইচ ও ছুটি বাইরে এসে আমার খোঁজ করেন। তিনি লক আপ থেকে সকলকে ছেড়ে দিলেন। সরস্বতী প্রতিমা ও তুলে দেন তাদের হাতে। তবে আমাকে সর্ত দিলেন। পুজোর পরদিন প্রতিমা বিসর্জন দিতে হবে এবং মণ্ডপ ভেঙে দিতে হবে। কারণ আগে এক ভয়ঙ্কর তান্ত্রিক” টাইগার বাবা” বহুদিন ধরে অনেকটা জমি দখল করে ছিন্ন মস্তা কালী মন্দির নির্মাণ করেছে। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলায় এলাকা থেকে পালিয়েছে মন্দির ঘরে তালা লাগিয়ে। সরস্বতী পূজার আয়োজন দেখে মণ্ডপের জমিও দখল করতে আসতে পারেন টাইগার বাবা। এই টাইগার বাবা উত্তর বঙ্গের ডালখোলার বাসিন্দা। একটি খুনের মামলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। খুব চালাক ব্যক্তি। তাই প্রতিমা বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে মণ্ডপ খুলে ফেলতে হবে। প্রণব দাকে  ধন্যবাদ জানিয়ে চলে এলে পুজোর উদ্যোক্তারা আমাকে আটকে দিল। উৎসবের আনন্দে আত্মহারা সকলেই। মণ্ডপ তৈরি হলো। মূর্তি বসানো হল। ম্যাজিকের মতো হাজার হাজার টাকা চাঁদা উঠে এলো। যেটা ভাবাও যায় নি। পুজোর আসরে ঝুগগি ঝুপরির বাসিন্দারা সকলে মিলে ১০০ কেজি দুধ যোগাড় করে নিয়ে এলেন। খিচুরি, মিষ্টান্ন তৈরি হলো। থানার অফিসারেরা প্রাসাদ খেতে এগিয়ে এলেন। সে যেন এক মহাযজ্ঞ। সুযোগ বুঝে টাইগার বাবাও হঠাৎ হাজির। পুলিশ গ্রেফতার করতে চেয়েও প্রণব দার ভয়ে সেকাজ করতে পারলো না। টাইগার বাবাও জাঁকিয়ে বসে পরলেন আশ্রমে। প্রনবদার বদান্যতায় সকলেই খুশি। রিং রোড সংলগ্ন সি বি আই কোয়ার্টার থেকে বাঙালিরা পরিবার সহ উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন।  প্রণব মুখার্জি র কাছে ভারত বাংলাদেশ ছিল এক সুতোয় গাঁথা। তিনি যখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন তখন বেশ কিছু প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে যথেষ্ট আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছিল। বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামে ভারতের সামরিক সাহায্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিতে সাহায্য করেছিল। সেই সময় ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের সময় প্রণব মুখার্জি র সঙ্গে পরামর্শ করেছিলেন।সেদিনের কথা কোন দিনই ভুলেন নি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদে প্রনবদা, প্রণব মুখার্জি ৫ বছর রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী যথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, বিদেশ মন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রী,হয়েছিলেন। এমনকি যোজনা কমিশনের ডেপুটি  চেয়ারম্যান ও হয়েছিলেন। কিন্তু কোনদিন জনগণের ভোটে জিতে ক্ষমতায় না আসতে পেরে তার মনে তীব্র ক্ষোভ ছিল।  একদিন সংসদে তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রির ঘরে গেলে বসতে বলেন।  প্রণব দা বলেন, লোকসভা নির্বাচনে না জিতে ক্ষমতায় আসার ফলে অনেকটা অস্বস্তিতে থাকতে হচ্ছে। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত মুর্শিদাবাদের শাহেনশা অধীর চৌধুরী আমাকে জঙ্গিপুর থেকে লোকসভা নির্বাচনে লড়তে অনুরোধ করেন। কিন্তু আমি প্রথমে রাজি হইনি। কারণ জঙ্গিপুর আসনটি ছিল বামেদের দুর্গ। সেখান থেকে জিতে আসা কি সম্ভব? অধীর চাপ সৃষ্টি করতে থাকলো। ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম। সেই প্রথম লোকসভা আসনে জিতে আসা। প্রণব দা বললেন ,অধীর খুব খেটেছে। অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে যখন পার্লামেন্টের সেন্ট্রাল হলে একথা বললাম,তিনি বললেন প্রনবদা নিজে পুরো লোকসভা কেন্দ্রের আনাচে কানাচে প্রচার করেছেন। হুড খোলা জিপে হাত জোড় করে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। গাড়ি যখন লোকালয় ছেড়ে খোলা মাঠের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল,কোন লোকজনের চিহ্নই নেই,প্রণব দার তবুও কোন হুঁশ ছিল না। হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি বললাম, দাদা কোন লোকজন তো নেই এখানে। হাতজোড় করে রয়েছেন  কাদের জন্য?  প্রনবদা  হেসে  বললেন, এ আমার অভ্যেস হয়ে গেছে। এমনই অত্যন্ত সহজ অথচ প্রখর ও তুখোড় মেজাজের মানুষ ছিলেন প্রণব মুখার্জি।

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ওপর আমার লেখা বইতে অনেক তথ্য দিয়েছি। প্রনাবদাও বইটি পড়েছেন। আজ খুব মনে পড়ে সেসব কথা।

আমাদের প্রকাশিত তথ্য ও সংবাদ আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)

Design by Raytahost.com