ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা: এটা নতুন কিছু নয়, দেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই তারা ভোট দিয়ে আসছেন। কিন্তু বিনিময়ে জলের ওপর নৌকোয়, নয়তো গ্রীষ্মকালে চরে বাস করছেন যুগ যুগ ধরে। কোন পরিবর্তন নেই। তবুও ভোটের ঢাকে কাঠি পড়তেই এরাও ভোটের ময়দানে হাজির হয়ে যান। ভোট দেন জল জঙ্গল ভেঙে হেঁটে গিয়ে। কিন্তু কীসের আশায়? অবাক হবেন না। নদীতেই বাস ওঁদের! লক্ষাধিক মানুষের বাস এক আশ্চর্য দ্বীপে। গ্রীষ্মকালে নদীর জল শুকোলে থাকতে হয় চরে। আর জল বাড়লে বাকি ছয় মাস বাঁধ বা রাস্তার ধারের তাঁবুতে,নয়তো নৌকোয়। এইভাবেই চলছে বছরের পর বছর। তবুও পুরভোটে ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে ওঁদের। উত্তর বঙ্গে মালদহে ইংলিশবাজার পুরসভার চার থেকে পাঁচটি ওয়ার্ডে শুধুমাত্র ভোটারের সংখ্যা বাড়াতেই বছর বছর মালদা জেলার বিভিন্ন ব্লক, প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসেছে বা আনা হয়েছে অসংখ্য পরিবারকে। দিনের পর দিন যাঁদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সম্পূর্ন বেআইনিভাবে বেদখল হয়ে যাচ্ছে নদী। অনেকেই আবার সেই চর মোটা টাকায় কিনেও নিয়েছেন। নদী বিক্রি হচ্ছে কীভাবে তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। সম্প্রতি একটি টিভি।,চ্যানেল ক্যামেরা বন্দি করে দেখিয়েছে , নদীর চরে জায়গা কিনে তাঁদের বসবাসের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন কাউন্সিলররাই। নদীতে বসবাসকারী সেইসব মানুষ থেকে শুরু করে বিদায়ী কাউন্সিলর সকলেই স্বীকার করেছেন সেই কথা। কাউন্সিলররাই ভোটার লিস্টে নাম তোলার ব্যবস্থাও করিয়েছেন। গ্রামের ভোটারকে তুলে এনে রাখা হচ্ছে নদীতে। পরে পুরএলাকার ভোটার তালিকায় নাম তোলা হচ্ছে। ভোটের সময় এই মানুষগুলোর কদর খুব বেশি।যদিও নদীর বুকে জল যখন কম সেই ছয়মাস তাঁরা সেখানেই থাকেন। বর্ষা এলেই নদী নিজের চেহারায় ফেরে, প্রতিবছর ডুবে যায় ঘর। সেই সময় বাঁধে বা উঁচু রাস্তার পাশে মাস ছয় তাঁবুতেই বসবাস। নদীর বুকে হলেও কাউন্সিলরদের ‘বদান্যতায়’ কারও কারও ঘরে বিদ্যুৎও চলে এসেছে। অধিকাংশের ঘরেই যদিও নেই। নেই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। নোংরা কাদা জলে নিয়মিত ছড়ায় অসুখ। নেই পানীয় জলের ব্যবস্থাও। সব থেকে বড় কথা তাঁদের আশ্রয় হয়ত আছে, কিন্তু ঠিকানা নেই।ঠিকানা মহানন্দা,,,,, মহানন্দা নদী কখনওই ঠিকানা হতে পারে না। তবুও ওঁরা ভোটার হয়ে যায় পুরসভার। বারে বারে জিতে আসা কাউন্সিলররা পুরভোট এলেই প্রতিশ্রুতির বস্তা নিয়ে ওঁদের কাছে নদীর ধারে হাজির হয়ে যান। এই বছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কারণ ইংলিশবাজার পুরসভার ৮ ৯,১২ ওয়ার্ডের প্রায় ৬০ শতাংশ ভোটই আসে নদীতে বসবাস কারীদের কাছ থেকে। যা স্বীকার করে নিয়েছেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাত বার জিতে আসা কাউন্সিলর কাকলি চৌধুরী। ভোটারদের ঠিকানা শুধু ” মহানন্দা নদী”। আশ্চর্যের বিষয়, নদীর নামেও তাদের কাছে চিঠি পৌঁছে যায়। কাউন্সিলরের চিঠি, ভোটের চিঠি। নদীতে বাস করে তাদের অনেকে মৎস্যজীবী, কৃষিজীবী হয়ে উঠেছেন। গ্রীষ্মকালে জল সরে গেলে কাদামাটিতে ফসল ফলাতে ওস্তাদ অনেকেই। কিন্তু সেতো সাময়িক। বাকি সময় বেকার। মুখ্য মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভান্ডার, বিনামূল্যে আটা ময়দা জোটে অনেকের। চলে যাচ্ছে এভাবেই।নৌকো করে এক জায়গা থেকে ভিন্ন জায়গাতে ঘোরা অভ্যেস হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর, গান ভেসে ওঠে শ্যামল মিত্রের , “এই খেয়া বাইবো কতো আর, এই খেয়া বাইব কোটি আর। সবাইকে পার করি আমি , আমায় কে করে পার, বিধিরে,,,,,”।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply