ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ আজকের বিশ্ব কাঁপানো ছবিটি দেখে অন্তত এক ফোঁটা চোখের জল ফেলে সারা বিশ্বের কাছে আবেদন করুন,খাদ্যের অপচয় না করে দরিদ্র,অভুক্ত মানুষদের মুখে তুলে দেওয়া হয়। দুর্ভিক্ষ অত্যন্ত মর্মান্তিক। ঠাকুমা,দিদিমা ও দাদুদের মুখে শুনেছিলাম ভারতে ১৯৪২ এর মন্বন্তরের গল্প। লক্ষ লক্ষ মানুষ এক পাত্র ভাতের ফ্যানের জন্য বাড়ী বাড়ী গিয়ে আর্তনাদ করেছেন। কতো লক্ষ মানুষ সেই পরাধীন ভারতে না খেতে পেয়ে মারা গেছেন। কঙ্কালসার মানুষকে রাস্তার ধারে মরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে সেদিনের সেই দুর্ভিক্ষ ছিল শাসক ব্রিটিশের তৈরি দুর্ভিক্ষ। তখন বিশ্ব যুদ্ধ চলছিল। জাপানের আক্রমণে বিপর্যস্ত ব্রিটিশ সমস্ত খাদ্য বস্তু লুকিয়ে ফেলেছিল যাতে জাপানিরা ভারতে খাদ্য না পায়। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তখন তার আজাদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে ভারতের মণিপুরে ব্রিটিশ সেনাকে পরাস্ত করে ইম্ফল জয় করে স্বাধীনতার পতাকা তুলেছিলেন। তার সেই অভিযানে জাপানের বায়ু সেনা ব্রিটিশ বাহিনীর ওপর বোমা বর্ষণ করে নেতাজীকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল। নেতাজির বাহিনীর রসদ সরবরাহ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল ব্রিটিশ।
এই ছবিটি সুদানের দুর্ভিক্ষের মর্মান্তিক ঘটনা।এই সেই পৃথিবী কাঁপানো ছবি যা তোলার পর ফটোগ্রাফার আত্মহত্যা করেছিলেন।
ছবিতে একটি শকুন বসে আছে কঙ্কালসার শিশুটির মৃত্যুর অপেক্ষায়, যেন মারা গেলেই সে ঝাঁপিয়ে পড়বে খাবারের ওপর! তুলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ফটোগ্রাফার কেভিন কার্টার।
মৃতপ্রায় শিশুটি ১৯৯৩ সালের মার্চ মাসে এক মুঠো খাবারের সন্ধানে দুর্ভিক্ষপীড়িত সুদানের আয়োদ থেকে প্রায় আধা মাইল দূরে জাতিসংঘের একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের দিকে এগোচ্ছিল। কিন্তু কিছুদূর গিয়েই আর এগোতে পারেনি। মুখ থুবড়ে পড়েছে মাটিতে। নিথর হয়ে গেছে। একটি ক্ষুধার্ত শকুন লোলুপ দৃষ্টি হেনে শিশুটির মৃত্যুর পর তার মাংস খাওয়ার জন্য প্রতীক্ষা করতে থাকে।
এই ছবি ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ The New York Times পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। ছবিটি সেই সময় সারা দুনিয়াব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৯৪ সালে ফিচার ফটোগ্রাফির জন্য পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছিল এই ছবি।
ফটোগ্রাফার কেভিন কার্টার পুলিৎজার পুরস্কার জেতার ৪ মাস পর মাত্র ৩৩ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন। পরে জানা যায় ছবিটি তোলার পর থেকেই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।
ছবিটির বিষয়ে কেভিন কার্টার তাঁর ডায়রিতে লিখেছিলেন :”হে সৃষ্টিকর্তা, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, আমি কখনোই আমার খাবার নষ্ট করব না তা যতই খারাপ স্বাদের হোক না কেন এবং আমি যতই ক্ষুধার্ত হই না কেন। আমি প্রার্থনা করি যে, ঈশ্বর এই ছোট্ট ছেলেটিকে রক্ষা করবেন, পথ দেখাবেন এবং তাকে তার দুঃখ থেকে মুক্তি দেবেন। আমি আরো প্রার্থনা করি আমরা আমাদের চারপাশের পৃথিবীর প্রতি আরো সংবেদনশীল হব এবং আমাদের ভেতরের স্বার্থপরতা ও সংকীর্ণতা দ্বারা অন্ধ হয়ে যাব না। আমি আশা করি এই ছবি সর্বদা আমাদের জন্য উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে যে, আমরা (শিশুটির তুলনায়) কতটা ভাগ্যবান এবং আমরা আমাদের জীবনধারণের খাবার কারণ ছাড়াই পেয়ে যাই এমনটা অবশ্যই মনে করব না। “আমরা দেখেছি বড় বড় শহরে পাঁচতারা, চারতারা হোটেল, ও বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে দৈনিক প্রচুর খাদ্য বাইরে ফেলে দিতে। একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে দৈনিক ভারতে যে পরিমাণ খাদ্যের অপচয় হয়,তাতে এক কোটি মানুষকে অনায়াসে দুবেলা দুমুঠো খাদ্যের ব্যবস্থা করা যায়। বিয়ে বাড়ি, অনুষ্ঠানের বাড়ীতে প্রচুর খাদ্যের অপচয় হয়। অপচয় বন্ধ করে এই নিপীড়িত, বুভুক্ষু মানুষের মুখে সেই খাদ্য তুলে দিলে অনেকেরই জীবন বাঁচানো যায়। ঠিক সুদানের এই মৃত্যু পথযাত্রী শিশুটির মতো অনেকের পাশে দাঁড়ানো যায়। তাই অপচয় বন্ধ করুন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply