প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসার আশ্বাস দিয়ে বলেন, দোষী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে, যাতে কেউ আর দেশবাসীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিদের দেখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধ্বংসযজ্ঞ ও নৃশংসতাকারী অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া উচিত, যাতে দেশের মানুষের জীবন নিয়ে কেউ আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে জামায়াত-শিবির, বিএনপি ও ছাত্রদল এসব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।
যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করেছে, তাদের খুঁজে বের করার জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, এটি একটি খুব বেদনাদায়ক পরিস্থিতি। অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন মৃত্যুর মিছিল হবে আমি কখনোই চাইনি। কিন্তু আজ বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটেছে। আমি কখনো চাইনি, এ দেশে কেউ তাদের প্রিয়জনকে হারাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং জনগণের উন্নত জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। তিনি আরও বলেন, আমার প্রশ্ন হলো, তারা এটা থেকে কী অর্জন করেছে। অথচ কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে! কত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নিহত ব্যক্তিদের আত্মার চিরশান্তি এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। তিনি বলেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন, আমরা তা করব, যাতে তাদের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি না ঘটে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা (ছাত্রদের) সব দাবি মেনে নিয়েছি, তাহলে আবার (আন্দোলন) কেন? এটা আমার প্রশ্ন। এটা কি জঙ্গিবাদের সুযোগ তৈরি করার জন্য?
প্রধানমন্ত্রী বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি ইউনিটে যান। তিনি আহতদের সেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত ও শিবির দেশের উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকরার জন্যই দেশব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছে। তিনি এ ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে সহায়তা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পুঁজি করে রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনে চালানো ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন করতে প্রধানমন্ত্রী গতকাল সেখানে যান। পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী এ’কথা বলেন।
মেট্রোরেল, বিটিভিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, সারা বাংলাদেশের আনাচকানাচে যে যেখানে আছে, তাদের খুঁজে বের করুন। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য সহযোগিতা করুন। আমি দেশবাসীর কাছে এই আহ্বান জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিন্তু টেলিভিশনের ওপর হাত দেয়নি বা কেউই কখনো দেয়নি। কিন্তু আজকে এই টেলিভিশন সেন্টারকে যারা এভাবে পোড়াল, একটা কিছু নেই যে তাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাহলে এরা কারা? এরা কি এ দেশেরই মানুষ? এদের কি এই দেশেই জন্ম? একটা দেশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার চিন্তা নিয়েই যেন তাদের এ আক্রমণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেল, যেটা ছিল সারা বিশ্বের প্রতিটি বাঙালির কাছে একটা সম্পদ, সেটাকে ধ্বংস করল। যার মাধ্যমে মানুষ অল্প সময়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারত। আজ সেটা বন্ধ। আর এই টেলিভিশন সেন্টারে তারা যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, যেসব জিনিস মানুষের সেবা করে মানুষের জন্য কাজ করে, সেই জায়গাগুলোতেই আঘাত। তিনি বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও আগুন দিয়ে পোড়াল। গাড়িগুলো, এমনকি জাপান থেকে আনা অত্যাধুনিক সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িগুলো পুড়িয়েছে, পানি শোধনাগারে হামলা করতে গেছে, পয়ঃশোধনাগারে হামলা, এটা কী হচ্ছে? কী তাদের মানসিকতা?
শেখ হাসিনা বলেন, আমি তাই দেশবাসীকে বলব, এই ঢাকাবাসীকেই বলব, আজ আপনাদের এই দুর্ভোগ, আমি তো লাঘব করে দিয়েছিলাম। কিন্তু যারা এটা ধ্বংস করল আর যাদের জন্য এ দুর্ভোগ আর যাদের জন্য আজ বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, আমি তাদের বিচারের ভার এ দেশের জনগণের ওপরই দিয়ে যাচ্ছি।
প্রধান মন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের কোটা বাতিলের জারি করা পরিপত্র বাতিলে হাইকোর্টের রায় যেখানে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল এবং সরকারের আপিলের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল, সেখানে কোটাবিরোধী আন্দোলনের কী ছিল, সে প্রশ্ন তিনি শিক্ষার্থী, তাঁদের অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের উদ্দেশে ছুড়ে দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ধৈর্য ধরে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, বারবার বলেছি, মন্ত্রীরা পর্যন্ত দিনের পর দিন বৈঠক করেছে। কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ করলাম, ওই মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রতিই তাদের যেন বেশি ক্ষোভ। তিনি বলেন, তাঁর একটি কথাকে বিকৃত করে নিজেদের রাজাকার আখ্যায়িত করে কত দিন তারা প্রতিবাদ করল। যার প্রতিবাদ প্রত্যেকটি শ্রেণি-পেশার মানুষ এমনকি ছাত্রলীগ, যুবলীগ থেকে শুরু করে প্রগতিশীল সংগঠনগুলো পর্যন্ত করেছিল। তখন তারা স্লোগান পরিবর্তন করল, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তা বিধানে তাঁর সরকার কারফিউ দিতে এবং সেনাবাহিনী নামাতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের জানমাল রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আজকে মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply