ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: ইউরোপের একটি দেশ । যেখানে এই দৃশ্য অহরহ দেখতে পাবেন । এমন অসংখ্য মানুষ রয়েছেন, যারা নিজেদের প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত বস্তু টাকা দিয়ে কিনে দোকানেই রেখে যান। কারণটা অত্যন্ত মানবিক। বহু মানুষ রয়েছেন, যারা পর্যাপ্ত খাদ্য বা বস্তু কিনতে পারেন না অর্থাভাবে। এটা তাদের জন্যই।
একটি রেস্তোরা। ঐ রেস্তোরার ক্যাশ কাউন্টারে এক ভদ্রমহিলা এলেন আর বললেন ৫ টা কফি আর একটা সাসপেনশন চাই। তারপর উনি পাঁচটি কফির বিল মেটালেন । কিন্তু আর চার কাপ কফি নিয়ে চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ পরে এক ভদ্রলোক এলেন আর অর্ডার দিয়ে বললেন, দুটো লাঞ্চ প্যাক করুন আর দুটো সাসপেনশন রাখুন। উনি চারটে লাঞ্চের বিল মেটালেন আর দুটো লাঞ্চ প্যাকেট নিয়ে চলে গেলেন। দুটি রেখে গেলেন রেস্তোরাঁতে।
তার কিছুক্ষণ পর আরো একজন এলেন। অর্ডার করলেন দশটা কফি ছটা সাসপেনশন। উনি দশটা কফির পেমেন্ট করলেন আর চারটে কফি নিয়ে গেলেন।
এভাবেই একের পর এক চলতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ পরে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি জর্জর অবস্থায় কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কোনো সাসপেনশন কফি আছে ?
কাউন্টার থেকে জানানো হলো অবশ্যই আছে এবং এক কাপ গরম কফি ওনাকে দেওয়া হলো।
তারও অল্প কিছুক্ষণ পরে এক দাড়িওয়ালা ভদ্রলোক ভিতরে এসে জিজ্ঞাসা করলেন আজ কি কোনো লাঞ্চ সাসপেনশনে রাখা আছে ? কাউন্টার থেকে যথারীতি সম্মতি জানিয়ে তাকে গরম খাবারের একটি পার্সেল আর এক বোতল পানি দেওয়া হলো।
এই ব্যাপারটা সারাদিন চলছে তো চলছেই। কিছু মানুষ নিজেদের পকেট থেকে নিজেদের অর্জিত রোজগার থেকে কিছু অজানা মানুষের খাওয়ার জন্যে পেমেন্ট করছেন আর কিছু গরীব দুস্থ মানুষ বিনা পেমেন্টে নিশ্চিন্তে খাওয়া দাওয়া করছেন। দিনভর চলছে এই কান্ড।
অথচ কেউ জানেনা কারোরই পরিচয়। না দাতা জানে গ্রহীতার পরিচয় না গ্রহীতা জানে দাতার পরিচয়।
প্রয়োজন নেই পরিচয় জানার,
প্রয়োজন নেই নিজের নাম জাহির করার।
কিন্ত প্রয়োজন আছে কিছু অভুক্ত মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেবার এবং সেটা একেবারেই গোপনে।
মানবিকতার এই চরম শিখরে পৌঁছনো দেশটির নাম “নরওয়ে”, এবং নরওয়ের দেখাদেখি এই পরম্পরা ছড়িয়ে পড়ছে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও!!
আমরা ভারত, বাংলাদেশ,পাকিস্তানের কেউ কি কোনদিন ভাবতে পারি, নাকি সেই মানবিকতা প্রদর্শন করতে পারি? বরং সামান্য কিছু দয়া দাক্ষিণ্য করলেও সেটি টিভি ক্যামেরা অথবা পত্রিকার ফটোগ্রাফারের ক্যামেরার সামনে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply