নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) থেকে পিছু হটার কৌশল খুঁজছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা জানিয়েছিলেন, আগামীতে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত থেকে এবার সরে আসতে চাইছেন ইসি।
আগামী ২১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য সংসদীয় তিনটি আসনের উপনির্বাচনের দুটিতে ইভিএম ব্যবহার করা হবেনা না। শুধু ঢাকা-১০ আসনে ইভিএমে ভোট হবে। গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনে চিরাচরিত ব্যালট পেপারে আস্থা রেখেছে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় না থাকার কারণে দুটি সংসদীয় উপনির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে ইভিএমের কাস্টমাইজেশন করার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই। তিনটি আসনে ২ মার্চ প্রকাশিতব্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা দিয়ে ভোট হবে। তবে ইভিএম থেকে আমরা পিছু হটছি না।
ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের পর দেশব্যাপী ইভিএম নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিলমারা প্রতিরোধে ইভিএম সংযোজন করা হলেও যন্ত্রটি ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। সদ্য সমাপ্ত দুই সিটিতে ইভিএমে ভোট হওয়ার কারণে ভোটার উপস্থিতি ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে কম। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে নির্বাচন কমিশনের। কেন্দ্রভিত্তিক অস্বাভাবিক ফলাফলও দেখা গেছে। কোথাও ১ শতাংশ আবার কোথাও ৭৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। বিগত সময়ে ভোটের আগে রাতে ব্যালটে সিল মারার ঘটনা ঘটলেও এবার ইভিএমে গোপনকক্ষ দখল করে প্রকাশ্যে ভোটদানে বাধ্য করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা ঘটলেও নির্বিকার ছিলেন নির্বাচন কমিশন।
তুমুল সমালোচনা, ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখতা, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব এবং ইভিএমে ভোটারদের এক ধরনের অনাস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে নির্বাচন কমিশন। এই বাস্তবায়তায় ভারতের চেয়ে ১১ গুণ বেশি টাকায় ক্রয় করা (পেপার ট্রেইলবিহীন) ইভিএম ভোটারদের মুখোমুখি দাঁড় না করিয়ে বিরতি দেওয়ার কৌশল খুঁজছিলেন ইসি। এজন্য ইভিএম ইস্যুতে ধীরে চলনীতি অবলস্বনের পক্ষে কমিশন। সামনের দুটি সংসদীয় উপনির্বাচনে যে যুক্তি বা বাস্তবতায় ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে না তা যুক্তিসংগত নয় বলে জানিয়েছেন ইসির সংশ্লিষ্টরাই।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ বলেন, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা ছাড়াই এবং নিজেদের সক্ষমতা না থাকলেও কেন আগামীতে সব নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দেওয়া হলো? ভোটারদের ওপর এভাবে ইভিএম চাপিয়ে দেওয়া ইসির কখনোই ঠিক হয়নি। ইভিএম ভোট দিয়ে ভোটাররা আসলেই সন্তুষ্ট নয়। এজন্য তৃতীয় কোনো পক্ষ দিয়ে বিদ্যমান ইভিএম পর্যালোচনা করে পেপার ট্রেইলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিশ্বের যেসব দেশ ইভিএম পরিত্যাগ করেছেন, সেইসব দেশ কেন ইভিএম থেকে সরে এসেছেন তা ইসিকে জানতে-বুঝতে হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply