নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গভীর রাতে বাসায় গিয়ে সাংবাদিককে আটকের পর ডিসি অফিসে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনকে কুড়িগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রবিবার দুপুরে এসব কথা জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
এর আগে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে জামিন দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের কারণে তাকে চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। আরিফুল ইসলামের পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২৫ হাজার টাকা জামানতে আরিফকে জামিন দেওয়া হয়েছে। তবে মামলাটির আপিল চলমান রয়েছে।
আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করে আমাদের বাড়ির গেটে ধাক্কাধাক্কির শব্দ শুরু হয়। আমরা জানতে চাই কারা ধাক্কাচ্ছে। এ সময় বলা হয়, দরজা খুলুন, না হয় ভেঙে ফেলা হবে। পরে তারা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে। ঢুকেই মারতে শুরু করেন আরিফকে। কেন মারছেন জিজ্ঞাসা করতেই তারা আরিফকে বলে, ‘তুই অনেক জ্বালাচ্ছিস।’ মারতে মারতে তাকে নিয়ে যায়।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে অনিয়মের সংবাদ পরিবেশন এবং ফেসবুকে দুর্নীতি সংক্রান্ত পোস্ট দেওয়ার কারণে উনি ক্ষুব্ধ হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ’
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে ডিসি সুলতানা পারভীন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘যদি ঐ ঘটনাই হতো, সেটা তো এক বছর আগের কথা। ঐটা যদি কোনো বিষয় হতো, তাহলে তো তখনই আমরা কোনো অ্যাকশনে যেতাম।’ তিনি বলেন, টাস্কফোর্সের নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
এদিকে গভীর রাতে সাংবাদিকের বাসায় টাস্কফোর্সের অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।যদি সূক্ষ্য ভাবে অভিযান চালানো হয় তাহলে বাংলাদেশের অনেক ওসি, এসপি, ও ডিসি রয়েছেন যারা দূর্নীতির সাথে জড়িয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাসা থেকে জোর করে তুলে নিয়ে মোবাইল কোর্ট সাজা দিতে পারে না। গাঁজা-মদ যদি ঘরে থেকেও থাকে, তবে তা নজরদারিতে রাখবে। এরপর যখন সময় হবে তখন তাকে মাদকসহ আটক করবে। আর এসব মাদকদ্রব্য যদি কেউ লুকিয়ে রাখে, তাহলে আমাদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তার নিজস্ব আইনবলে পদক্ষেপ নেবে।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে আরিফুল ইসলামকে মাদকবিরোধী অভিযানের কথা বলে আটক এবং পরে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযানের সময় মাদকসহ আরিফুল ইসলাম রিগানকে আটক করা হয় বলে দাবি করেছেন অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টো বিকাশ চাকমা।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply