করোনা সংকট সময়ে অনলাইন ব্যবসায়ের গতিপ্রবাহ ঠিক রেখে জনসাধারণকে জরুরী পণ্যসেবা পৌঁছে দিতে গৃহিত পদক্ষেপ ও ই-কমার্সের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) অনলাইনে ১৩ মে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ই-ক্যাবের উপদেষ্ঠা নাহিম রাজ্জাক এমপি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, এফবিসিসিআই এর সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব মো. ওবায়দুল আজম, ডব্লিউটিও সেল এর পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান।
বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, যেভাবে মানুষ জরুরী প্রয়োজনীয় পন্যের জন্য ই-কমার্সের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী এক বছর পর ই-কমার্স, মার্কেটপ্লেস, লজিস্টিক সব সেবা মিলিয়ে এই খাতে প্রায় ৫ লাখ কর্মসংস্থানের জোরালো সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে।
ই-ক্যাবের উপদেষ্ঠা নাহিম রাজ্জাক এমপি বলেন, অনলাইন ব্যবসার গতি ডিজিটাল পেমেন্টকে ত্বরান্বিত করবে এবং আমাদের আগামী দিনের ডিজিটাল অর্থনীতির চাকা আরো গতিশীল হয়ে উঠবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ই-ক্যাবের মতো সবাই নিজেদের করনীয় সম্পর্কে সচেতন হলে আমাদের লক্ষ্যপূরণ সহজ হয়ে যাবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, করোনা সংকটের শুরু থেকেই ই-ক্যাবের ডাকে সাড়া দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নির্দেশনাকে গুরুত্ব দিয়েছে অন্যদিকে জনসাধারণ ও ডেলিভারী সেবায় নিয়োজিত কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে ধাপে ধাপে অনুমতি দিয়েছে। এক সময় বিজনেস সেক্টর পুরোটাই ই-কমার্স নির্ভর হয়ে পড়বে। তাই সম্ভাবনাময় এই খাতের জন্য ঋণসুবিধা নিয়ে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসা উচিত। প্রয়োজনে তাদের ঋণ দেয়ার শর্তকে শিথিল করার আহবান জানান তিনি।
এফবিসিসিআিই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ই-কমার্সের সম্ভাবনা আমাদের সামনে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। এখন আমরা যদি ক্রস বর্ডার ই-কমার্সকে সহযোগিতা করে আরো বিকশিত করতে পারি, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এই খাত। যারা এখনো প্রচলিত পন্থায় ব্যবসা করেন তাদের ই-কমার্সে আসার সময় হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে অনেকে অনলাইন বিজনেস শুরু করেছেন।
ই-ক্যাব প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার তার বক্তব্য বলেন, করোনা সংক্রমণ সমস্যায় নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের প্রসার হলেও ই-ক্যাবের ৯২ ভাগ উদ্যোক্তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে পড়েছিল। শুধুমাত্র ই-ক্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কর্মী কাজ করছে। যাদের ২৬ শতাংশ নারী। ই-ক্যাবের ১১০০ সদস্য প্রতিষ্ঠান প্রায় ৬৬৬ কোটি টাকার বিশাল ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। যারা আগেই পহেলা বৈশাখ ও ঈদের জন্য মালামাল ক্রয় করেছে তাদের ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশী। শুধুমাত্র অফিসভাড়া এবং কর্মীর বেতন বাবদ মাসিক খরচের চাপ রয়েছে ৪৮০ কোটি টাকা। ক্রস বর্ডার ই-কমার্স থেকে যে ১০০ কোটি টাকা বৈদিশক মুদ্রা অর্জিত হতো তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এসব ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় সরকারের কাছে ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে ২৪০ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য এবং ৬শ কোটি টাকা সহজ শর্তে ঋণ চাওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ই-কমার্স সেক্টরের বর্তমান ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দ্বিগুন হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।
ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ই-ক্যাব ইতোমধ্যে অনলাইন মেম্বার রেজিস্ট্রেশন সুবিধা চালু করেছে। ঘরে বসেই এখন ই-ক্যাবের মেম্বার হওয়া যায়। করোনা সংকটের শুরুতেই ই-ক্যাব ভার্চুয়াল সেক্রেটারিয়েট চালু করেছে। ই-কমার্স ও লজিস্টিক সেবা সংক্রান্ত তথ্যের জন্য একটি সাপোর্ট সেন্টার খোলা হয়। করোনা সংক্রান্ত তথ্যের জন্যও একটি আলাদা তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। করোনায় অভাবগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে ই-ক্যাব মানবসেবা ডট কম নামে একটি বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মাধ্যমে ই-ক্যাবের সদস্য ও দাতাদের অনুদান দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এ যাবত ৫ শতাধিক মানুষকে জরুরী খাদ্য সহযোগিতা করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, চালডাল, ওয়ালটন, ইভ্যালী, ডায়বেটিক স্টোর, ফুডপান্ডা, হাংরিনাকি, এসএসএল কমার্জ ও সিন্দবাদ এর প্রতিনিধিবৃন্দ।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply