রাগ ও ক্ষোভে ফুঁসছে যুক্তরাষ্ট্র। পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। জ্বলছে আগুন। চলছে ভাঙচুর লুটপাট। করোনা মহামারিতে যখন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, তখন সংঘাতেও ঘটছে হতাহতের ঘটনা।
২৫ মে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বড় শহর মিনিয়াপলিসে পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ নির্মমভাবে নিহত হন। এরপরই শুরু হয় বিক্ষোভ।
উত্তাল হয়ে ওঠে মিনিয়াপোলিস। মঙ্গল ও বুধবার বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীরে মিনিয়াপলিসের একটি থানায় আগুন জ্বালিয়ে দেন। ঐ অগ্নিসংযোগের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। বেশ কয়েকটি ভবন ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।
শুক্রবার কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নেমে আসেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। বিভিন্ন সড়কে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ শহরে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেন। এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পরিস্থিতিকে নজিরবিহীন বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসের সামনে কয়েকশ বিক্ষোভকারী কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা ফ্লয়েডের ছবি হাতে নিয়ে ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ স্লোগান দিতে থাকেন।
স্লোগানের এই কথা ফ্লয়েড মৃত্যুর আগে পুলিশ অফিসারকে বারবার বলছিলেন। যা এখন পুরো যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে।
এর আগে স্থানীয় সময় সকাল ৭টার দিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হতে শুরু করেন বিক্ষোভকারী। পরে তারা হোয়াইট হাউসের দিকে অগ্রসর হলে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস টুইট করে বলে, ‘আমাদের কর্মীরা বিক্ষোভ চলাকালীন অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করছে। জননিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সবাইকে শান্ত থাকতে বলছি।’
অপরদিকে সহিংস বিক্ষোভের মুখে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা।
নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, আটলান্টা, পোর্টল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, টেক্সাস, ওহাইও, নর্থ ক্যারোলিনা, মিশিগান, এবং অন্যান্য শহরগুলিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে।
লস এঞ্জেলস, শিকাগো, ডালাস, ডেনভার, হিউস্টন, লুইজভিল, ফিনিক্স, কলম্বাস ও মেম্ফিসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়।
বিক্ষোভকারীরা আটলান্টায় বেশ কয়েকটি ভবনে ভাঙচুর চালিয়েছে। পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। ডালাসে প্রতিবাদকারীদের ইট-পাথর ছোড়ার পর পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়ে।
নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সড়কে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। গ্রেফতার করা হয়েছে অনেককে।
এদিকে পোর্টল্যান্ডের মেয়র টেড হুইলার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। কারফিউ জারি করেছেন। তিনি টুইটারে লিখেন, রবিবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ চলবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘ভয়ানক ব্যাপার’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। নিহত আফ্রিকান এই আমেরিকানের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের গাড়িতে জাল নোট থাকার খবর পেয়ে তাকে পুলিশ আটক করে বলে দাবি করা হয়। এরপর তার সঙ্গে পুলিশ যা আচরণ করে তা বর্বর যুগকেও ছাড়িয়ে যায়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের ভিডিওতে দেখা গেছে, হাঁটু দিয়ে তার গলা চেপে ধরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার। এসময় ফ্লয়েড বারবার বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘প্লিজ, আমি শ্বাস নিতে পারছি না’।
নিহত ফ্লয়েড নিরস্ত্র ছিলেন। নিঃশ্বাস নিতে না পেরে তাকে কাতরাতে দেখা যায়। শেষপর্যন্ত শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যান।
ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় চার পুলিশ কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করে মিনিয়াপোলিস পুলিশ বিভাগ। এদের মধ্যে ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরা ৪৪ বছর বয়সী ডেরিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।
কৃষ্ণাঙ্গদের দাবি, বর্ণবিদ্বেষের বলি হয়েছেন ফ্লয়েড। হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে এখনো বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। সূত্র: সিএনএন, বিবিসি, এপি
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply