করোনার প্রভাবে দেশ দূর্যোগকাল পার করলেও রাষ্ট্রিয় অর্থলোপাটের পাঁয়তারা থেমে নেই। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এক লিফটের দাম ২ কোটি টাকা, ৫০ টনের এসি ৫২ লাখ, পিএবিএক্স-ইন্টারকম প্রতি সেট টেলিফোন ১৫ লাখ আর টেবিলের দাম ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে । বুধবার (১৭ জুন) এই ভয়ংকর অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল প্রতিবেদন প্রচার করে। এতে বলা হয়, পরিকল্পনা কমিশনের কাছে বরাদ্দ চেয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রেরণ করা প্রস্তাবে প্রতিটি প্যাসেঞ্জার লিফটের দাম ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ২১টি লিফটের মোট দাম ধরা হয়েছে ৪০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। যদিও প্রকার ভেদে বর্তমান বাজার মূল্যে একটি লিফটের দাম সর্বনিম্ন ২৫ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ৫০ টনের এসি ইউনিটির দাম ধরেছে ৫২ লাখ টাকা। বর্তমান বাজেরে বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রতিটন এসির দাম সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রস্তাবিত অর্থে ১০০ টন এসি কেনা সম্ভব, অর্থাৎ দ্বিগুণ অর্থবরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
অর্থ বরাদ্দের প্রতিটি প্রস্তাবে পাওয়া যায় অর্থ লোপাটের পরিকল্পনা। সিকিউরিটি এন্ড গেট লাইট সাড়ে ১২ লাখ টাকা প্রতিটি, সভাকক্ষের টেবিলের দামও ১২ লাখ টাকা। পিএবিএক্স-ইন্টারকম ব্যবস্থার প্রতিটি টেলিফোনের দাম ধরা হয়েছে ১৫ লাখ। লাগবে ৭টি প্রকল্পের জন্য। সাবমার্সিবল পাম্পের প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা করে। লাইটনিং অ্যারেস্টার বা আর্থিং প্রতিটি সাড়ে ১৭ লাখ টাকা দাম ধরা হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক খরচ ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা করে। আর একটি গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ৬ লাখ টাকা।
এছাড়া প্রতিটি সিসি ক্যামেরা ৩০ হাজার ও আইপিএসের দাম ধরা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা করে। ইনকিউবেটরের দাম ধরা হয়েছে ৮০ হাজার। খাঁচার দাম ৪০ হাজার, ফুল সাবিকিব টেবিল ৮০ হাজার, হাফ সাবিকিব টেবিল ৫০ হাজার, রিভলভিং চেয়ার ২০ হাজার টাকা করে। হাতলসহ কুশন চেয়ার ১২ হাজার টাকা। ঘাসকাটার মেশিন প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এই আকাশ-কুসুম অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের অর্থ ব্যবস্থাপনা সচিব আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনিয়মের পক্ষেই সাইফ গেয়েছেন। প্রতিটি লিফটের দাম ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা লেখা থাকলেও তিনি বলেন, এই ইউনিট অর্থাৎ ৩টি লিফটের দাম ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। যদিও নথিতে লেখা মোট ২১টি লিফটের দাম ধরা হয়েছে ৪০ কোটি ৯৫ লাখ।
দামের অসমঞ্জাস্যের বিষয়টি তুলে ধরলে সচিব বলেন, পিডব্লিউডি আর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বিলটি প্রস্তাব করেছে। এই বিষয়ে তারা ভালো বলতে পারবেন। তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগের করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন ফোন কেটে দেন। গত বছর ফরিদপুর মেডিকেলে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকার পর্দা কিংবা রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের ছয় হাজার টাকার বালিশকাণ্ডে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় তোলে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, বরিশালের বাকেরগঞ্জ, ফেনীর ফুলগাজী, যশোর, ময়মনসিংহ, বগুড়া ও রংপুর সদরে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করতে ব্যয় ধরা হয় ৪৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ধারণা করা হয়েছিল, করোনাকালে জীবন ঝুঁকিতে থাকা মানুষ অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে দূরে থাকবে, তবে তাকে ভূল প্রমাণ করলো যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
টিআইবি জানায়, দুর্নীতিবাজদের শাস্তির বদলে রক্ষার চেষ্টায় অনিয়ম থামার বদলে বাড়ছে। সরকারি প্রকল্পে অনিয়মের খবর প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ, গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। তবে তা খুব কমই আলোর মুখ দেখে। শাস্তির বদলে অদৃশ্য কারণে রেহাই পায় দুর্নীতিবাজরা। এমন অভিযোগ করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, দূর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া কিংবা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় বন্ধ হচ্ছে না এই ধরনের দুর্নীতি। সুশাসন আর জবাবদিহিতার অভাবে দিনে দিনে সরকারি দুর্নীতি ক্রমান্বয়ে কমার বদলে বাড়ছে। এখনই এর লাগাম টেনে না ধরলে দুর্নীতি বাড়বে বৈকি কমবে না। রাষ্ট্রীয় অর্থ লোটপাট পাঁয়তারা প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি সংগঠিত হওয়ার পর, তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে পারে দুর্নীতি দমন কমিশন। কারো প্রস্তাবের ওপর তদন্ত করতে পারে না দুদক।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply