আমাদের ইতিহাসবিদ, লেখক ও গবেষকদের একটি দায় রয়েছে, আর তা হচ্ছে জিয়াউর রহমানের মুখোশ উন্মোচন। সম্পূর্ণ ভাঁওতাবাজির উপর এই লোকের এমন একটি ইমেজ তৈরি করা হয়েছে যে, নিরপেক্ষ হতে হলে তাকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিতে হবে। কিন্তু তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে যথার্থভাবে পর্যবেক্ষণ করলে প্রমাণ হয় যে, জিয়া প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযোদ্ধা ছিল না, ছিল পাকিস্তানের এজেন্ট।
জিয়াকে নিয়ে সাজানো হয়েছে সততার নাটক অথচ তার নামে পাওয়া সাভারের জমি বা এফডিআর সম্পর্কে কিছু বলা হয় না, শাহী মোগল রেসিপি ছাড়া খাবার না খেলেও ছড়ানো হয়েছে বেগুন ভাজি ও কাঁচা বেগুন খাওয়ার কথা, বলা হয় না মদ্যপানের কথা, বাংলা ভাষার প্রতি দরদ দেখাতে বলা হয় ৭১ সালে কৃষককে থাপ্পড় মারার কাহিনী অথচ সে নিজে বাংলা লিখতে পারতো না। এই মিথ্যাচার গড়িয়েছে মক্কা মদিনা পর্যন্ত। আরাফাতের ময়দানে পাকিস্তানের জিয়াউল হকের নিম গাছের কাহিনী প্রচার হয়েছে জিয়ার নামে। মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য ওসমানী কর্তৃক ৩ বার সতর্ক করা জিয়ার সাফাই দিতে সবচেয়ে বড় যে মিথ্যাচারটি প্রচার হয়েছে এবং যার ভিত্তিতে জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকাকে বিবেচনা করা হয় সেটি হচ্ছে জাঞ্জুয়া কাহিনী। জাঞ্জুয়াকে নিয়ে তৈরি করা মিথ্যা ও ভণ্ডামির ইতিহাস তুলে ধরলে উন্মোচিত হবে জিয়ার মুখোশ।
জিয়ার বাবা-মা পশ্চিম পাকিস্তানকে নিজ ভূমি হিসেবে বেছে নিয়েছিল, জিয়া পশ্চিম পাকিস্তানি হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল, জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে পাকিস্তানে, তারেকের জন্ম পাকিস্তানে এবং ৬৯ এ বাংলাদেশে এসেছে পাকিস্তানি ইন্টেলিজেন্সের একজন হিসেবে, প্রো-পাকিস্তানি এমন সবকিছু গোপন করার ক্ষেত্রে মূলত একটি ঘটনাই ভূমিকা রেখেছে তা হচ্ছে জাঞ্জুয়া। এ নিয়েও দু ধরণের কাহিনী প্রচলিত।
এক. জাঞ্জুয়াকে গ্রেফতার করেছে। দুই. জাঞ্জুয়াকে হত্যা করেছে। এক. গ্রেফতার করা হলে জাঞ্জুয়া গেল কোথায় ? মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে, খালেদা জিয়া চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা গেল কীভাবে ? দুই. জাঞ্জুয়কে হত্যা করার কাহিনী সবচেয়ে বেশি প্রচলিত এবং জিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার সূত্রপাত এখান থেকেই।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ৩ জন জাঞ্জুয়ার অস্তিত্ব জানা যায় !
১. আসিফ আলী জাঞ্জুয়া: ১৯৪৮ সালে কাশ্মীরে মৃত্যুবরণ করে। ২. ইফতেখার খান জাঞ্জুয়া: ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর হেলিকপ্টার ক্র্যাশে মৃত্যুবরণ করে। ৩. আসিফ নেওয়াজ জাঞ্জুয়া: যে ১৯৭১ সালে ঢাকায় পাকবাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করে। পরবর্তীতে আইএসআই ও পাক সেনাবাহিনীর প্রধান হয়।
বিএনপির ইতিহাসবিদরা যে জাঞ্জুয়াকে গ্রেফতার বা হত্যার কথা বলে তার নাম আব্দুর রশীদ জাঞ্জুয়া হিসেবে দাবি করা হয়। এই জাঞ্জুয়াকে যদি হত্যা করা হতো তাহলে শহীদ খেতাবসহ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সম্মাননা পদক পাওয়ার কথা। অথচ পাকিস্তানের কোনো খেতাবের তালিকায় এই জাঞ্জুয়ার নাম পাওয়া যায়নি।
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, জিয়াকে অস্ত্র খালাস করার নির্দেশ দিয়েছিল কোন জাঞ্জুয়া ? উত্তর একটিই। জাঞ্জুয়াকে জিয়া গ্রেফতার বা হত্যা করেনি। খালেদাসহ জাঞ্জুয়াকে ঢাকায় পালানোর সুযোগ দিয়েছে জিয়া। এবং সে আসিফ নেওয়াজ জাঞ্জুয়া। এই জাঞ্জুয়া ৯১ এর নির্বাচনে বিএনপিকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল এবং এই জাঞ্জুয়ার মৃত্যুতে ১৯৯৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সব প্রোটোকল ভঙ্গ করে শোকবার্তা পাঠিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়।
এখানেই শেষ নয়, ইতিহাসের এই খেলায় পাকিস্তানের সহায়তাও নেয়ার চেষ্টা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে জাঞ্জুয়া বিভ্রাট রয়েছে। কিন্তু সেই নামের কারো সন্ধান পাওয়া যাবে না পাক আর্মিতে। লেফটেনেন্ট কর্নেল পদমর্যাদার একজনকে হত্যা করা হবে আর সে নিশান-এ হায়দার পাবে না এটা অবিশ্বাস্য একটি বিষয় ! সর্বোচ্চ খেতাব বাদ দিলাম, হিলাল-এ-জুরতও কি পাবে না ?
জিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা বানানো ষড়যন্ত্রটি খুব পরিষ্কার। এ কারণেই জিয়া ৬৫ সালে হিলাল-এ-জুরত পেলেও ৭১-এ এক রাউন্ড গুলিও ছোঁড়েনি। এ কারণেই পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে শিশু পার্ক তৈরি করে মন্তব্য করেছিল, মুসলমানদের পরাজয়ের চিহ্ন মুছে দিলাম। জিয়ার এই ভণ্ডামির ইতিহাস উন্মোচন করা ইতিহাসবিদদের পবিত্র দায়িত্ব।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply