টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মধুপুরে একই পরিবারের চারজনকে হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামি সাগর আলী (২৬) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ জুলাই) বিকেলে টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শামসুল আলম জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানবীর আহম্মেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, জবানবন্দিতে সাগর জানিয়েছেন- মাত্র ২০০ টাকা ধার না পাওয়ায় তিনি একই পরিবারের চারজনকে খুন করেন।
তানবীর আহম্মেদ আরও জানান, ঘাতক সাগর মধুপুর উপজেলার ব্রাহ্মণবাড়ী গ্রামের মগরব আলীর ছেলে। আদালতে সাগর জানান, মধুপুর পৌরসভার উত্তরা আবাসিক এলাকার আব্দুল গণি মিয়া সুদের ব্যবসা করতেন। সাগর তার বাসার পাশেই ভাড়া বাসায় থেকে রিকশা চালাতেন। গণি মিয়ার সঙ্গে তার আগে থেকেই সুদের টাকার লেনদেন ছিল। সাগর বেশ কয়েকবার সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হন। গত মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) তিনি গণি মিয়ার কাছে ২০০ টাকা ধার চাইতে যান। গণি মিয়া টাকা ধার না দিয়ে বকাঝকা করে সাগরকে তাড়িয়ে দেন। এতে সাগর অপমানিত বোধ করেন। ২০০ টাকা ধার না পাওয়া এবং অপমান করে তাড়িয়ে দেয়ায় সাগর তার অপর এক সহযোগীকে নিয়ে গণি মিয়াকে হত্যা এবং টাকা-পয়সা লুটের পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সাগর তার সহযোগীকে নিয়ে বুধবার (১৫ জুলাই) রাত ১০টার দিকে গণি মিয়ার বাসায় যান। যাওয়ার আগে তার সহযোগী বাজার থেকে চেতনানাশক ওষুধ নিয়ে যান। সাগর পূর্বপরিচিত হওয়ায় গণি মিয়া তাদের বাসায় ঢুকতে দেন। সাগর ও তার সহযোগী আকস্মিকভাবে চেতনানাশক ব্যবহার করে গণি মিয়াকে অচেতন করে ফেলেন। পরে একে একে পরিবারের সবাইকে অচেতন করেন। এ সময় গণি মিয়া ছাড়া পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। সবাই অচেতন হওয়ার পর ওই বাড়িতে থাকা কুড়াল আর তাদের সঙ্গে আনা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে সাগর ও তার সহযোগী মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে বাসার বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান।
আদালত পরিদর্শক তানবীর আহম্মেদ জানান, জবানবন্দি শেষে সাগরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক। এর আগে ২০ জুলাই সাগরের সহযোগী ব্রাহ্মণবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার জোয়াদ আলীর (৩০) তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গত শুক্রবার (১৭ জুলাই) সকালে মধুপুর পৌরসভার উত্তরা আবাসিক এলাকার নিজ বাড়ি থেকে ভ্যান-রিকশা-অটোর ব্যবসায়ী আব্দুল গণি মিয়া (৪৫), তার স্ত্রী তাজিরন বেগম (৩৮), ছেলে কলেজছাত্র তাজেল (১৭) ও মেয়ে সাদিয়ার (৮) গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওইদিন রাতেই আব্দুল গণি মিয়ার বড় মেয়ে সোনিয়া বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করে মধুপুর থানায় মামলা করেন। শনিবার (১৮ জুলাই) নিহতদের মরদেহ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে গণি মিয়ার পৈত্রিক বাড়ি মধুপুরের গোলাবাড়িতে তাদের দাফন করা হয়।
এরপর রোববার (১৯ জুলাই) বিকেলে হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান আসামি সাগর আলীকে মধুপুরের মির্জাবাড়ি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণবাড়ী থেকে গ্রেফতার করেন টাঙ্গাইল-১২ এর সদস্যরা। গ্রেফতারের পর ঘাতক সাগর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পরে তার বোনের বাড়ি একই উপজেলার ব্রাহ্মণবাড়ী থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো ছুরি ও লুট করা মালামাল উদ্ধার করে র্যাব। পরে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়ী এলাকা থেকে জোয়াদ আলী নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে সোমবার (২০ জুলাই) জোয়াদকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply