জেলা প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চারাবাড়ি সেতুর পূর্বপাড়ের অ্যাপ্রোচের ভাঙনরোধে ফেলা প্রায় ১৩ লাখ টাকার জিওব্যাগে বালুর পরিবর্তে কাদামাটি ব্যবহার করা হয়েছে। সম্প্রতি কাজটি সম্পন্ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলজিইডির দায়িত্বরত প্রকৌশলীর যোগসাজশে ঠিকাদার বালুর পরিবর্তে নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে কাদামাটি উত্তোলন করে ও জিওব্যাগে ভরে ভাঙনকবলিত অ্যাপ্রোচে ব্যবহার করেছে। ফলে নদীর পানি কমলেই অ্যাপ্রোচে শুরু হবে আবার ভাঙন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১ জুন এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় ১৭০.৬৪২ মিটার চারাবাড়ি তোরাপগঞ্জ সড়কের ধলেশ্বরী নদীর ওপর এই সেতু। টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের কাতুলী, হুগড়া, কাকুয়া, মাহমুদনগর আর নাগরপুরের ভাড়রা ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ সেতু দিয়ে চলাচল করে। গত ১৮ জুলাই সেতুর বাম তীরের অ্যাপ্রোচ ধসে পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যান চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ।
পরবর্তীতে সেতুর ভাঙন ঠেকাতে আর চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আপাতত জিওব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় এলজিইডি। অ্যাপ্রোচ ভাঙনের পরিমাপ করে ১২ লাখ ৯৭ হাজার টাকায় মোট তিন হাজার বালুর জিওব্যাগ ফেলার কাজটি পান ওই এলাকার মেসার্স মিতু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন। ২৩ জুলাই কাজটি শুরু করে ২৯ জুলাই শেষ হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরজুড়ে সেতুর পাশ থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। এজন্য বর্ষা এলেই নদী ভাঙন শুরু হয়। ফলে চলতি বন্যায় ভাঙনের কবলে পড়েছে সেতুর অ্যাপ্রোচ। সেতুর ওপারের ঘোষপাড়ায়ও দেখা দেয় ভাঙন। মাটি উত্তোলন বন্ধে দফায় দফায় অভিযোগ দেয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সেতু সংস্কারের আগে অবৈধ মাটি বিক্রি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয়রা জানায়, সেতুর ভাঙনকবলিত অ্যাপ্রোচে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কথা থাকলেও নদী থেকে কাদামাটি দিয়ে জিওব্যাগ ভর্তি করেছেন ঠিকাদার। এরপরও ওজনে দেয়া হয়েছে কম। বালুর পরিবর্তে মাটি দেয়ায় নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জিওব্যাগগুলোর মাটি সরে অ্যাপ্রোচের স্থলে থাকবে। সেই সঙ্গে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।
ধলেশ্বরী নদীর চারাবাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ ফরিদ।
মেসার্স মিতু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন বলেন, ভাঙনকবলিত অ্যাপ্রোচের জন্য তিন হাজার জিওব্যাগ নির্ধারণ করা হলেও দুই হাজার ৬৭১ ব্যাগ ফেলা হয়েছে। অবশিষ্ট ৩২৯ জিওব্যাগ পরিষদ ভবনে মজুত রাখা হয়েছে। জিওব্যাগ ডাম্পিং সমস্যাজনিত কারণে দুটি নৌকায় কিছু পরিমাণ কাদামাটি এনে অ্যাপ্রোচের ভাঙন এলাকায় ফেলা হয়। জনস্বার্থে আর বালুর অভাবে স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ীর সহায়তায় কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরের (এলজিইডি) সহকারী প্রকৌশলী মো. ফিরোজ রেজা বলেন, চারাবাড়ি সেতুর অ্যাপ্রোচের ভাঙনরোধে তিন হাজার জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। কাজটি তদারকি করেছি। দুই হাজার ৬৭১ জিওব্যাগ ফেলা সম্পন্ন হলেও অতিরিক্ত ৩২৯ ব্যাগ আপতকালীন হিসেবে মজুত রাখা হয়েছে। সম্পন্নকৃত কাজে নির্ধারণকৃত বালুর পরিবর্তে কাদামাটি ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। তবে এরপরও যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply