রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় মেডিকেল অফিসের তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। ‘পাতি নেতা’ হিসেবে পরিচিত মো. সোহেল নামে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের রাজনীতিতে জড়িত ওই কর্মচারী কাউকেই পরোয়া করেন না। এক নারী সহকর্মীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের বিভক্ত দুটি পক্ষ। ফলে ব্যবস্থা তো নেওয়া যাচ্ছেই না, উল্টো সৃষ্টি হয়েছে উত্তপ্ত অবস্থা। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় মেডিকেল অফিসে স্টেনো টাইপিস্ট পদে কর্মরত মো. সোহেল। রেল শ্রমিক লীগের একটি অংশের চট্টগ্রাম রেলওয়ে মেডিকেল শাখার সভাপতি তিনি। করোনা মহামারির মধ্যেও শ্রমিক লীগের দুটি অংশ তার পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি শোডাউন করায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর সিআরবিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনো সময় দু’পক্ষ অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে পড়তে পারে। এ নিয়ে শঙ্কিত রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ব্যাহত হচ্ছে রেল হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমও।
সাধারণ একজন কর্মচারী হলেও সোহেলের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। সর্বশেষ গত ১২ মে রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার (ডিএমও) ডা. ফাতেমা আকতারের কাছে এক নারী কর্মচারী সোহেলের বিরুদ্ধে অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্য, উত্ত্যক্ত করা এবং অফিসে ঠিকমতো কাজ করতে না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন। অভিযোগটি প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ হওয়ার কথা উল্লেখ করে সোহেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ মেডিকেল অফিসার (সিএমও) ডা. সামশুল আলম মো. ইমতিয়াজ বাবুলের কাছে সুপারিশ করেন ডিএমও। এর পর গত ১৬ জুন সিএমও আরেকটি চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সরদার শাহাদাত আলীকে অবহিত করেন এবং সোহেলকে বদলি করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। এর আগে গত বছরের ২৭ নভেম্বর ডিএমও ফাতেমা আকতার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কাছে সোহেলের বিভিন্ন অনিয়মের সুনির্দিষ্ট চিত্র তুলে ধরে একটি অভিযোগ করেন।
রেলে কোনো নিয়োগ হলে ডোপ টেস্ট করা হয়। সোহেলের বিরুদ্ধে বড় একটি অভিযোগ, পছন্দের ল্যাবে মোটা অঙ্কের কমিশন নিয়ে ডোপ টেস্ট করাতে বাধ্য করেন তিনি। সর্বশেষ রেলে খালাসি পদে ৮৬৩ জন লোক নিয়োগ করা হয়। ওই ডোপ টেস্ট নিয়েও সোহেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন ডিএমও। কিন্তু এত কিছুর পরও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
ডিএমও ডা. ফাতেমা আকতার বলেন, আমার অধীনে কাজ করা স্টেনো টাইপিস্ট সোহেল কাউকে পরোয়া করেন না। অফিসের কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলার ধার ধারেন না। সহকর্মীদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন। বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মো. সোহেল বলেন, অফিসের কিছু কাজ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আমার কাছে কর্মকর্তাদের কিছু কাগজপত্র ছিল। এগুলো ইতোমধ্যে হস্তান্তর করেছি। এ ছাড়া নারী সহকর্মীর সঙ্গে যে সমস্যা চলছিল তাও মিটমাট হয়ে গেছে।
এসব বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সিএমও ডা. সামশুল আলম মো. ইমতিয়াজ বাবুল বলেন, স্টেনো টাইপিস্ট মো. সোহেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মহাব্যবস্থাপকের কাছে সুপারিশ করেছি।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় রেলওয়ে শ্রমিক লীগ দুই গ্রুপে বিভক্ত। দুই অংশের আলাদা দুটি কমিটিও রয়েছে। চট্টগ্রামে সংগঠনটির একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অংশটির কার্যকরী সভাপতি লোকমান হোসেন এবং আরেকটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন অংশটির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম। সোহেল রেল শ্রমিক লীগে লোকমানপন্থি হিসেবে পরিচিত। সোহেলকে নিয়ে সৃষ্টি হওয়া বিরোধে সিরাজুল ইসলাম হয়রানির শিকার শ্রমিক-কর্মচারীদের পক্ষে অবস্থান নিলে মুখোমুখি হয়ে পড়েন তারা। গত ২৭ জুলাই এই দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি শোডাউনের পর থেকে উত্তেজনা বিরাজ করছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তরসহ এর অধীন বিভিন্ন কার্যালয়ে।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, সোহেল নিজের পদ ব্যবহার করে মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেন। এর ভাগ পাওয়ায় লোকমান হোসেনও তার পক্ষ নিয়েছেন। কিন্তু আমরা মেডিকেল নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না বলে এর প্রতিবাদ জানিয়েছি।
তবে লোকমানপস্থি রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক গোকুল চক্রবর্তী বলেন, ডিএমওর সঙ্গে স্টেনো টাইপিস্ট মো. সোহেলের ভুল বোঝাবুঝি থেকে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। লোকমান হোসেনসহ আমরা কথা বলে বিষয়টি মিটমাট করে দিতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আমরা চলে আসার পর আরেকটি গ্রুপ সেখানে গিয়ে শোডাউন করে আসে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply