এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের দাপনাজোর হাকিমপুর এলাকায় বিদ্যুতের লাইন না টানিয়ে এবং কোন প্রকার সংযোগ না দিয়েই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) টাঙ্গাইলের বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ-১ এর ভৌতিক বিল ও মামলা দিয়ে সাধারন মানুষকে হয়রানীর প্রতিবাদে মানব বন্ধন করেছেন এলাকার ভুক্তভোগীরা।
রবিবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে প্রায় পাঁচ শতাধিক নারি পুরুষ ও ভূক্তভোগিদের অংশ গ্রহনে এ মানব বন্ধন কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায় উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের দাপনাজোর হাকিমপুর গ্রামে ভুক্তভোগী শ্যমলা বেগমের সেচ মেশিনে কোন প্রকার বিদ্যুৎ লাইন না দিয়েই আবেদন করার পাঁচ বছর পর হঠাৎ করে প্রায় সোয়া লাখ টাকার অলৌকিক বিদ্যুৎ বিল বানিয়ে এবং সেই বিল খেলাপির অপবাদ দিয়ে টাঙ্গাইলপিডিবি অফিস এলাকাবাসীর উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বক্তব্য রাখেন, ভুক্তভোগী শ্যামলা বেগমের ছেলে সুরুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন তালুকদার, স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মেহেদী হাসান এলিট, মুক্তিযোদ্ধা আজহার আলী সিকদার, দুলাল হোসেন, আব্দুস সবুর, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান, জাহিদ সিকদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ২০১৪ সালের শেষের দিকে শ্যামলা বেগম একটি সেচ মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগ আনার জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) টাঙ্গাইলের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর অধীনে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ওই সময় শ্যামলা বেগমের সেচ মেশিনে সংযোগ দেওয়া তো দুরের কথা কোনও খুঁটি স্থাপন ও লাইনও টানানো হয়নি। অথচ আবেদনের প্রায় পাঁচ বছর পর সম্প্রতি শ্যামলা বেগমের নামে এক লাখ ১৪ হাজার ৬২৭ টাকা বিদ্যুৎ বিল খেলাপি দেখিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছে পিডিবি টাঙ্গাইল।শুধু এই শ্যালা বেগমই নয় এলাকার আরও অনেকে পিডিবির সংযোগের জন্য আবেদন করে সংযোগ না পেয়ে পল্লি বিদ্যুৎ লাইন নিয়েছে। এসব আবেদনকারির নামেও ভূয়া বিল করে, বিল না দিলে মামলার ভয় দেখিয়ে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা নিয়েছে এই অফিস। আমরা পিডিবির এসব মিথ্যা বিল, মামলা ও হয়রানীর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং পিডিবির এমন হিংস্র হয়রানীর কবল থেকে শ্যামলা বেগমসহ ভুক্তভোগিদের মুক্তির জোড় দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজি অলিদ ইসলাম পিডিবির কর্মকর্তাদের অসৌজন্য আচরন, সিন্ডিকেট দূর্ণীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়ত্বহীনতায় হয়রানী হচ্ছে এলাকার মানুষ। বিদ্যুৎ বিভাগের (পিডিবি) এমন হয়রানী মূলক কর্মকান্ড বন্ধের দাবি জানান। তিনি বলেন এ বিষয়ে ২৯ আগস্ট মোবাইলে ফোন করে আমি আমার পরিচয় দিয়ে বিনয়ের সাথে পিডিবির বিউবি-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদত আলীর নিকট বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি আমাকে উল্টো প্রশ্ন করে বলে আপনি কেন ফোন দিয়েছেন? আপনার দরকার হলে অফিসে এসে কথা বলেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর এমন অপ্রত্যাশিত আচরনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিষয়টি জেলা মিটিং এ উত্থাপনের কথাও উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের দাপনাজোর হাকিমপুর গ্রামের মৃত আব্দুল সবুর মিয়ার স্ত্রী শ্যামলা বেগম সেচ মেশিনে বিদ্যুৎ লাইন নেয়ার জন্য ২০১৪ সালের শেষের দিকে বাসাইল পৌর এলাকার মশিউর রহমান নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ লাইনের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) টাঙ্গাইলের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর অধীনে আবেদন করেন। ওই সময় দাপনাজোর হাকিমপুর, দেউলী ও মুড়াকৈ এলাকার ১২ জনের কাছ থেকে সেচ মেশিনে বিদ্যুতের লাইন পাইয়ে দিতে মশিউর রহমান ১১ লাখ টাকা নেন। পরে ২০১৫ সালের প্রথম দিকে তিনি ৯ জনের সেচ মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেন। এছাড়া গ্রাহকের নিজ দায়িত্বে বাঁশ ও সিমেন্টের খুঁটি ও তার কিনে আরও দুইজন তাদের সেচ মেশিনে সংযোগ নেয়। ওই সময় রহস্যজনক কারণে দূরত্বের অজুহাতে শ্যামলা বেগমের লাইন না দিয়ে সংশ্লিষ্টরা তার লাইন বাতিলের কথা বলে কাজ শেষ করে চলে যায়। সেই আবেদনের প্রায় পাঁচ বছর পর সম্প্রতি টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী দফতরের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ (বিউবো) এর সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইমুম শিবলী বাদী করে নির্বাহী প্রকৌশলী টাঙ্গাইলের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) বিদ্যুৎ আদালতে শ্যামলা বেগমের নামে মামলাটি করান। এ মামলায় আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর বিবাদী বৃদ্ধা শ্যামলা বেগমকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply