মো. আনোয়ার হোসেন তরফদার ভালুকা ঃ
ভালুকা তিতাস গ্যাস অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতি যেন এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে। অফিসের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। চাকুরির পাশাপাশি কন্ট্রাকটারীও করছে কেউ কেউ। গোটা উপজেলা জুড়ে মাকড়সার জালের মতো ঝুঁকিপূর্ণভাবে ছড়িয়ে আছে অবৈধ গ্যাস লাইন।
জানা যায়, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড ভালুকা জোনাল বিপণন অফিসের আওতাধীন এলাকায় গ্যাসের অবৈধ লাইন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নৈরাজ্য চলে আসছে। টাকার বিনিময়ে অত্যান্ত বিপজ্জনকভাবে পাতলা প্লাস্টিকের পাইপ রাস্তা কেটে টেনে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে বাসা বাড়িতে। তবে এই সংযোগ শুধু আবাসিকেই নয়, বড় বড় শিল্প কারখানাতেও দেওয়া হচ্ছে। আর মাসে মাসে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অপরদিকে অবৈধভাবে বসানো এসব লাইনের কারণে শুধু যে গ্যাস চুরি হচ্ছে তা নয়, গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থাও ভয়ানক বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে মানুষের নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। তাছারা যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা আবাসিক গ্রাহক গ্যাস লিকেজের বিষয়েও অভিযোগ করেন বা মিটারের নাম পরিবর্তন করতে চান তাঁদের কাছ থেকেও অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়। টাকা না দিলে তাঁদের নানা হয়রানি করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড ভালুকা জোনাল বিপণন অফিসের আওতাধীন এলাকার বিভিন্ন স্থানে ২০ হাজার থেকে লাখ টাকার বিনিময়ে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। আর এই প্রক্রিয়ায় গত কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিতাস গ্যাসের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঠিকাদাররা, স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। এসব অবৈধ সংযোগ থেকে এককালীন টাকা পাচ্ছে তিতাস গ্যাসের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। আবার এককালীন টাকা নেওয়ার পরও মাসিক বিল নিচ্ছে একটি চক্র। আর এর ভাগ তিতাস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বুঝে নিচ্ছেন কানায় কানায়। উচ্চ পর্যায়ের চাপে কোথাও লাইন কাটা হলেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে কিছুদিন পরই আবার অবৈধ সংযোগ নেওয়া হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধি ও তাদের সমর্থকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ তত্ত্বাবধানে চলছে এই গ্যাস চুরির মহাযজ্ঞ। যার জন্য সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরজমিনে জানা যায়, ভালুকা পৌরসভা, সিডষ্টোর, মাস্টাবাড়ি, ত্রিশাল, গফরগাঁও, শ্রীপুরের জৈনা বাজারসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। অবৈধ সংযোগ নেওয়া বাড়িওয়ালা এক চুলার জন্য ১হাজার ও দুই চুলার জন্য ১৫শত টাকা দেয় স্থানীয় একটি চক্রকে। এসবের সাথে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড ভালুকা জোনাল বিপণন অফিসের ব্যবস্থাপক প্রেকৌশলী মোহাম্মদ দেলুয়ার হোসেন, সিনিয়র প্রো-কর্মী মতিউর রহমান ও আব্দুর রউফ, স্থানীয় দালাল ফারুখ মিয়া, রফিক আহাম্মেদসহ অন্তত ৫০ জনের একটি চক্রের।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অভ্যুদয়’ এর সাধারণ সম্পাদক জুনায়েত হোসেন রিপেল বলেন, ‘তিতাসের কর্মীরা ঘুষের বিনিময়ে বাইপাসের মাধ্যমে গ্যাসের সংযোগ দেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে অনুমোদনের অতিরিক্ত চুলা ব্যবহার করতে দিয়ে মাসে মাসে মোটা অংকের টাকা তুলা হয়। এতে সরকার একদিকে যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে অপরদিকে ছোটখাটো দূর্ঘটনাও ঘটছে।’
অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিষয়ে জানতে চাইল তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড ভালুকা জোনাল বিপণন অফিসের ব্যবস্থাপক প্রেকৌশলী মোহাম্মদ দেলুয়ার হোসেন বলেন, ‘লিখিত আবেদন ছাড়া আমি কোন বক্তব্য দিবোনা।’
নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা খাতুন জানান, ‘আমি মাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়টি সমন্ধে আমি ওয়াকেবহাল নই। তবে এমনটা হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply