আনোয়ার হোসেন।নিজস্ব প্রতিনিধিঃ যশোরে শ্রীমা সারদা দেবীর ১৬৮তম জন্মতিথি উৎসব উদযাপিত হয়েছে। ধর্মীয় নানা আচারানুষ্ঠান ও আলোচনসভার মধ্য দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে যশোর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও রামকৃষ্ণ মিশন মন্দির প্রাঙ্গণে এ উৎসব হয়। দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল মঙ্গলারতি, বৈদিক স্তোত্রপাঠ ও প্রার্থনা, বিশেষ পূজা, হোম, যজ্ঞ, পুষ্পাঞ্জলি, ভজন সংগীত, ধর্মগ্রন্থপাঠ, ‘শ্রীমা সারদাদেবীর জীবন ও আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনাসভা, ভক্তিমূলক সংগীত এবং অন্ন প্রসাদ বিতরণ।
ভোরবেলা মঙ্গলারতির মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ উৎসব। এরপর বৈদিক স্তোত্রপাঠ ও প্রার্থনা করেন আশ্রমবাসীরা। সকাল আটটায় শুরু হওয়া বিশেষ পূজা সম্পন্নের পর আলোচনাসভার শুরুতে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশেন করেন যশোর সারদা সংঘের সদস্যবৃন্দ।
আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী জ্ঞান প্রকাশানন্দ। প্রধান অতিথি ছিলেন যশোর সরকারি মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মনিকা মোহন্ত। বিশেষ অতিথি ছিলেন যশোর আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক সম্পূর্ণা সেন ও যশোর মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক কণিকা দত্ত। আলোচক ছিলেন যশোর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রাবণী সুর। স্বাগত বক্তব্য দেন যশোর সরদা সংঘের সদস্য শম্পা সাহা। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন যশোর রামকৃষ্ণ আশ্রমের সাবেক সভাপতি গোবিন্দ লাল সাহা। সঞ্চালনা করেন যুক্তা দাস।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শ্রীরামকৃষ্ণের মতে ‘মাতৃভাব সবচেয়ে শুদ্ধভাব।’ শ্রীমা সারদাদেবী সেই মাতৃভাবের প্রতিমূর্তি। যিনি অনুকরণীয় শান্তিময় আদর্শ ব্যক্তিত্ব। তিনি সবসময় মানুষের মঙ্গল কামনায় কাজ করেছেন। যার আদর্শ আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, শ্রী মা সারদা দেবীর মতে অপরের দোষ নয়, দোষ দেখবে নিজের’। মায়ের এ মত মেনে চললেই নিজ স্বভাবের মূল্যায়ন ও পরিমার্জনাই আত্মগত সংকট থেকে আমারা নিস্তার পেতে পারি। মা সারদা তাঁর ঐশীবোধ, প্রজ্ঞা ও বিবেচনা বোধ, অপার জ্ঞান ও নিগুঢ় ভালবাসা ছড়িয়ে দিয়ে যে পথে মানব কুলকে এগিয়ে দিতে চেয়েছিলন আজও তা অনুসরণ ছাড়া আমাদের মুক্তি নেই। তাই তার জন্মতিথিতে ভালোবাসা আর ভক্তির মাধ্যমে আমরা শ্রী মা সরদাদেবীর আশীর্বাদ কামনা করি।
জন্মতিথি উৎসব এ অনুষ্ঠানে আলোচনা শেষে ভক্তিমূলক সংগীত পরিবেশন করেন পাপিয়া ঘোষ, দীপান্বিতা সাহা, মৌ বসু, চন্দনা সিংহ ও শম্পা সাহা। উৎকর্ষ যশোরের পরিচালনায় এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। দুপুরে ভক্তদের মাঝে অন্ন প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
শ্রীমা সারদাদেবী ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি হিন্দু ধর্মগুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসের পত্মী ও সাধনসঙ্গিনী এবং রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সংঘজননী।
জয়রামবাটী গ্রামে সারদা দেবীর জন্ম। তাঁর বিবাহপূর্ব নাম ছিল সারদামণি মুখোপাধ্যায়। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে শ্রীরামকৃষ্ণের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁর জীবনীকারদের মতে, গার্হস্থ ও সন্ন্যাস জীবনের আদর্শ স্থাপন করার জন্য তাঁরা উভয়ে অবিচ্ছিন্ন ব্রহ্মচর্যের অনুশীলন করে জীবনযাপন করতেন। শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর অবশিষ্ট জীবন সারদাদেবী অতিবাহিত করেন জয়রামবাটি ও কলকাতার উদ্বোধন ভবনে। তাঁর সমগ্র জীবন ছিল স্বামী, ভ্রাতা ও ভ্রাতৃ-পরিবারবর্গ এবং তাঁর আধ্যাত্মিক সন্তানদের প্রতি সেবা ও আত্মত্যাগে উৎসর্গিত। শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যগণ তাঁকে আপন জননীর আসনে বসাতেন। গুরুর প্রয়াণের পর উপদেশ ও উৎসাহলাভের আশায় ছুটে আসতেন তাঁর কাছে। সামান্য গ্রাম্য নারীর জীবন অতিবাহিত করলেও তিনি তাঁর জীবৎকালে এবং পরবর্তীকালে ভক্তদের নিকট মহাশক্তির অবতার রূপে পূজিত হতেন
জন্মতিথি উৎসব এ অনুষ্ঠানে আলোচনা শেষে ভক্তিমূলক সংগীত পরিবেশন করেন পাপিয়া ঘোষ, দীপান্বিতা সাহা, মৌ বসু, চন্দনা সিংহ ও শম্পা সাহা। উৎকর্ষ যশোরের পরিচালনায় এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। দুপুরে ভক্তদের মাঝে অন্নপ্রসাদ বিতরণ করা হয়
উল্লেখ্য, ১৮৫৩ সালের ২২ ডিসেম্বর (বাংলা ১২৬০ সনের ৮ পৌষ, হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, অগ্রহায়ণ কৃষ্ণা সপ্তমী তিথি) পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর মহকুমার অন্তর্গত প্রত্যন্ত গ্রাম জয়রামবাটীর এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে সারদা দেবীর জন্ম হয়। তাঁর বাবা রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও মাতা শ্যামাসুন্দরী দেবী অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ছিলেন। সারদা দেবীর পিতৃকূল মুখোপাধ্যায়-বংশ পুরুষানুক্রমে রামের উপাসক ছিলেন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply