জনগণের অধিকার জনগণকে ফেরত দেওয়ার জন্য দ্রুত একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডাঃ এ. জেড. এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, আজকে দেশ একটি যুব সন্ধিক্ষণে আছে। সামনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মরহুম অ্যাড. আফসার আহম্মদ সিদ্দিকীর ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে আফসার আহম্মদ সিদ্দিকী স্মৃতি ফাউন্ডেশন।
জাহিদ বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কারা ক্ষমতায় আসবে আর কারা আসবে না। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে তারা কি ধরনের সংস্কার চায়। সংস্কার মানে হলো, যে সমস্ত দলীয়করণ হয়েছে সেগুলো ঠিক করতে হবে। সব দলমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মানুষ এই মহূর্তে এটাই চাই। সেজন্য অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উচিত দ্রুত নির্বাচন দেওয়া।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, দেশের মানুষের জন্য কিছু করলে দেশের মানুষ আপনার সাথে থাকবে। আর না করলে পালিয়ে যেতে হবে। তিনিতো (শেখ হাসিনা) বলেছেন দেশ থেকে পালিয়ে যাবেন না। কিন্তু, ৭২ ঘণ্টার ভেতরে পালিয়ে গেছেন। যারা দেশের মানুষকে অবজ্ঞা করেছে, মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মেরে ফেলেছে তারা আজকে কোথায়।
অ্যাড. আফসার আহম্মদ সিদ্দিকীর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তিনি রাজনৈতিক জীবনে একজন বর্ণাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন। তার মতো নেতারা আর আসবে না।
আফসার আহম্মদ সিদ্দিকী স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি বেগম জাহানারা সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সহ-সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, আবুল বাশার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। আফসার আহম্মদ সিদ্দিকীর ছোট ছেলে জামিল আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন যে, আমার আবব্বাকে আপনারা সবাই দোয়া করবেন। তিন যেন জান্নাতবাসী হন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সহ-সভাপতি আফসার আহমদ সিদ্দিকীর ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী।
সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে যে কজন নেতার নাম শোনা যায় তাদের অন্যতম নেতা ছিলেন মরহুম আফসার আহমদ সিদ্দিকী। মফস্বল শহর যশোর জেলার রাজনীতির সঙ্গে জীবনের সিংহভাগ সময় অতিবাহিত করণেও জাতীয় রাজনীতিতে তিনি যে এতটাই সাফল্য অর্জন করবেন সেটা অনেকেরই ছিল অজানা। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘ ১টি বছর তিনি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় অফিসকে আগলে রেখেছিল শ্রেফ আদর্শ দিয়ে। তার মতো প্রজ্ঞাবান আদর্শ রাজনীতিবিদ খুবই কম জন্মেছে বাংলাদেশে। প্রচারবিমুখ এ মানুষটি তাই চলে গেলেন অনেকটা নীরবে নিভৃতে। তার ২৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৩৫ সালের ১৫ মার্চ যশোরের সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এই রাজনীতিকের রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল সেই ছাত্রজীবন থেকেই। পিতা মরহুম কায়সার আহমদ সিদ্দিকী ছিলেন যশোরের ডিস্ট্রিষ্ট নাজির। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী আফসার আহমদ সিদ্দিকীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় যশোর জেলা স্কুল থেকে। এরপর যশোর এম এম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৫৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি নিয়ে তিনি ১৯৫৮ সালে সুপ্রীম কোর্টে আইনজীবী হিসাবে যোগদান। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম স্থানীয় নির্বাচনে ১৯৭৩ সালে তিনি যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। যুদ্ধবিধ্বস্ত যশোর শহরকে কিভাবে একটি আধুনিক শহরে রূপ দেয়া যায় তার পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন এই আফসার আহমদ সিদ্দিকী। পৌরসভার দায়িত্বভার কাধে তুলে নিলেও রাজনীতি থেকে তিনি নিজেকে কখনও বিচ্ছিন্ন করে রাখেননি। ছাত্ররাজনীতি থেকে অব্যহতি নিয়ে তিনি জাতীয় রাজনীতিতে যোগ দেন মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ)। তিনি যশোর জেলা ক্রীড়া সমিতির সহ- সভাপতি ও খুলনা বিভাগীয় ফাইট কমিশনার, যশোর শিক্ষা বোর্ডের সদস্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তৎকালীন ইউনাইটেড পিপলস পার্টি তার সভাপতিত্বে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ১৯৭৮ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসন থেকে দু দুবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে যশোর জেলা উন্নয়ন সমন্বয়কারী (ডিডিসি) নিযুক্ত করেন। তিনি একজন ভাষা সৈনিকও ছিলেন এবং ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হয়ে ২ বৎসর কারাবরণ করেন। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮২ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ৮২ এর সামরিক স্বৈরাশাসন বিরোধী আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। এরশাদের সামরিক স্বৈরশান বিরোধী আন্দোলনের রূপরেখা তৈরী এবং বিভিন্ন সময়ে পত্র পত্রিকায়, বক্তৃতা- বিবৃতি প্রদানে তিনিই ছিলেন একমাত্র নেতা যার নিকট থেকে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে সক্ষম হতো। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের দীর্ঘ ৯ বছর কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্দোলনরত সাত, আট ও পাঁচ দলীয় জোটের লিয়াঁজো কমিটির সদস্য হিসাবে অপরিসীম ভূমিকা পালন করেন তিনি। তিনি মেহনতি মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ন্যায়পরায়ণ, সৎ ও দক্ষ এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অতি প্রিয়ভাজন ব্যক্তি ছিলেন। দলের প্রচার প্রসারে তার লেখা প্রেসবিজ্ঞপ্তি লিফলেট তৎকালীন আন্দোলনে সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তার বিরুদ্ধে অনেকেই ষড়যন্ত্র করতো, কিন্তু তিনি কোন দিন প্রতিবাদ করেন নাই। বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালনসহ মৃত্যুর পূর্ব মুহুত পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মরহুম আফসার আহমদ সিদ্দিকী ২০০১ সালের ১২ অক্টোবর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply