“নফস” একটি আরবি শব্দ যা পবিত্র আল কুরআনে এসেছে যার আক্ষরিক অর্থ হল “সত্ত্বা” এবং একে “মন”, “অহংবোধ” বা “নিঃশ্বাস” হিসেবে অনুবাদ হয়।
১-নফসে-আম্মারা
২-নফসে-লাউয়ামা
৩-নফসে-মোৎমায়েন্না
৪-নফসে-মূলহেমা
৫-নফসে-রাহমানিয়া
নফস এই পাঁচটি পর্যায়! পবিত্র কোরআন মাজিদে এ তিনটি নফসের কথা
স্পষ্ট ভাবে পাওয়া যায় ‘নফসে আম্মারা’ ‘নফসে লাউয়ামা’ ও ‘নফসে মোৎমায়েন্না’।
চতুর্থ নফসটি হচ্ছে ‘নফসে মূলহেমার’ আর পঞ্চম নফসটি হচ্ছে ‘নফসে রাহমানিয়া’ যা সাধন বলে জানা যায়।
আসুন নফস সমুহের কিঞ্চিৎ ব্যাখ্যা জেনে নেই।
১/ নফসে আম্মারা : যে নফস আত্মশুদ্ধির কোনরূপ ধারধারে না, যাতে তার সাময়িক আনন্দ ও সুখ তাতেই সে মত্ত থাকে এবং দুনিয়াকেই তার একমাত্র কাম্য ও লক্ষ্যরূপে রেখে জীবনযাপন করে সেরূপ নফসকে ‘নফসে আম্মারা’ বলে। নফসে আম্মারা অসংখ্য প্রবৃত্তির দাস। আমিত্বের আবর্জনায় সে সম্পূর্ণ কলুষিত।
২/ নফসে লাউয়ামা : যে নফস আত্মশুদ্ধির জন্য সর্বপ্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চলেছে তাকে ‘নফসে লাউয়ামা’ বলে প্রবৃত্তির সর্বপ্রকার তাড়নার বিরূদ্ধে সে যুদ্ধে লিপ্ত থাকে। এই নফস আমিত্বের অপরাধের মধ্যে বাস করলেও তার জন্য সে অনুতপ্ত থাকে। অনেক ভুল-ত্রুটি সে দূর্বল মুহূর্তে করে ফেললেও সে আমিত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত মোজাহেদ।
৩/ নফসে মোৎমায়েন্না : যে নফস প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়যুক্ত হয়েছে বা পরিশুদ্ধ হয়ে গেছে তাকে ‘নফসে মোৎমায়েন্না’ বলে। এই নফস নিশ্চিন্ত। এই নফসকে বিজয়ী নফস বলা যেতে পারে। এই প্রকার নফস আল্লাহর ইচ্ছার উপর নিজ ইচ্ছা ছেড়ে দিতে পেরে তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট হয়ে যায়। মোৎমায়েন্না নফসকে লক্ষ করে আল্লাহ কোরআনে বলছেনের সুরা আল ফজর এ বলেছেন (আয়াত ২৭-৩০) “হে প্রশান্ত মন (মোৎমায়েন্না নফস)! তুমি তোমার রবের দিকে ফিরে এস, তুমি (আল্লাহতে) সন্তুষ্ট এবং (আল্লাহ হতে) সন্তোষ প্রাপ্ত। সুতরাং আমার সেবক দলে প্রবেশ কর এবং আমার জান্নাতে (শান্তিময় আবাসে) প্রবেশ কর।” নফস এই পর্যায়ে আসলে আল্লাহতালা তাকে দাস বলে স্বীকৃতি দান করেন এবং জান্নাতে (শান্তিময় আবাসে) প্রবেশ করিয়ে দেন।
৪/ নফসে মূলহেমা: যে পরিশুদ্ধ নফস সর্বদা আল্লাহ হতে ‘এলহাম’ -এর দ্বারা পরিচালিত হয়; আপন ইচ্ছায় কোন কর্মই করে না তাকে ‘নফসে মূলহেমার বলে। আল্লাহর প্রত্যক্ষ বানী দ্বারা তার প্রতিটি কর্ম-কান্ড পরিচালিত হয়। এই পর্যায়ের নফস পাপ পুন্যের ঊর্ধ্বে চলে যায়, কারন যা আদিষ্ট হয় তাই করেন এবং মানবীয় সেখানে থাকে না। ভাল কাজে কোন পুন্য নেই, কারন ভাল কাজে তার কোন কৃতিত্ব নেই, যেহেতু তার নিজ ইচ্ছা বা অনিচ্ছার প্রয়োগের বালাই নাই। মন্দের উল্লেখ করাই বাহুল্য। কারন আল্লাহ্ মন্দ কাজের আদেশ করেন না। এই শ্রেণীর লোকেদের কাজ-কর্ম মানুষের সাধারণ বুদ্ধির ঊর্ধ্বে। আপাতদৃষ্টিতে অন্যায় কোন কাজ তাহাদিগ হতে প্রকাশ পেতে দেখলেও তাতে নিগূঢ় রহস্য আছে বলে মনে করতে হবে।
৫/ নফসে রহমানিয়া : একজন সাধক এই পর্যায়ে এসে পূর্ন মুক্তি লাভ করে এবং পরম আত্মার স্বভাব লাভ করে অর্থাৎ সর্বদা বাকাবিল্লার স্তরে অবস্থান করে এবং আল্লহর জাতের সাথে মিশে গিয়ে পূর্ন অলীত্ব্য (বন্ধুত্ব) অর্জন করে।
এখানে পঞ্চ নপসের সংক্ষিপ্ত ব্যখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র।
ইহার স্থান কাল ভাব ও বৈশিষ্ট্য আপন আপন শিক্ষা গুরু, পীর মোর্শেদ এর ভজনা করে তাহার নিকট হতে জেনে নেয়াই উত্তম।
সুফি মোহাম্মদ আহসান হাবীব, অতিন্দ্রীয় সাধক ও গবেষক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সম্পাদক ও প্রকাশক, দুরন্ত সত্যের সন্ধানে (দুসস)
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply