হারুত মারুত নামক ফেরেশতাদের নামে বানোয়াট কাহিনী! এ কাহিনীটি বর্ণিত হয়েছে সুরা আল বাকারার ১০২ নং আয়াতের ব্যাখ্যাকে কেন্দ্র করে।
আমরা হয়ত অনেকেই হারুত মারুত নামক দুইজন ফেরেশতার নামে বর্ণিত বহুল প্রচলিত ঘটনাটি শুনেছি। আর তাহল, যখন মানুষেরা দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালার সাথে নাফরমানী ও কুফরীতে লিপ্ত হয়ে গিয়েছিল তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহ তায়ালাকে বলেছিলেন: হে আল্লাহ! আপনিতো মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আপনার ইবাদাত ও আনুগত্য করার জন্য। কিন্তু, তারা কুফরী করছে (সত্যকে অস্বীকার করছে), মানুষ হত্যা করছে, অন্যদের সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষন করছে, চুরি-ডাকাতি, ব্যভিচার, মদ্যপান ইত্যাদি অপরাধে লিপ্ত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বললেন: তারা আমার আযাব (শাস্তি) দেখেনি। তোমরা তাদের জায়গায় থাকলে তোমরাও একই কাজ করতে। ফেরস্তারা বলল, না, এটা অসম্ভব। আমাদের দ্বারা এমন অপরাধ সংঘটিত হতেই পারে না। তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, ঠিক আছে, তোমাদের মধ্য থেকে দুইজন ফেরেশতাকে নির্ধারণ করে দাও। আমি তাদেরকে কিছু বিষয়ে নির্দেশ প্রদান করব এবং কিছু বিষয়ে নিষেধ করব। তখন তারা হারুত ও মারুত নামক দুইজন ফেরেশতাকে নির্বাচন করলো। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিলেন। তাদের উপর নির্দেশ ছিল আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করার এবং নিষেধাজ্ঞা ছিল, আল্লাহ’র সাথে কাউকে অংশীদার স্থাপন না করার, অন্যায়ভাবে মানুষ খুন, অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ, চুরি ডাকাতি, জ্বিনা-ব্যভিচার ও মদপান ইত্যাদি না করার জন্য।
তারা দুনিয়ায় কিছুকাল অবস্থান করতে লাগলেন এবং মানুষদেরকে সত্য দিয়ে শাসন করতে লাগলেন। ঐ জামানায় যোহরা নামে একজন অতিশয় সুন্দরী মহিলা ছিল। তারা দুইজন সেই মহিলাকে কাছে পেতে চাইলেন। মহিলাকে এ প্রস্তাব দিলে মহিলা এক শর্তে প্রস্তাব গ্রহণ করে। আর প্রস্তাবটি ছিল- তাদের উভয়কেই মহিলার ধর্মগ্রহণ করতে হবে। তারা জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার ধর্ম কি? মহিলা একটি মুর্তি বের করে দিল। তারা জবাবে বললেন: ওটার পুজা করার কোন প্রয়োজন আমাদের নেই। এ কাজ আমরা করতে পারব না। তারা ফিরে গিয়ে আরও কিছুকাল ধৈর্যধারণ করলেন। কিছুকাল পর আবার ওই মহিলার কাছে এসে বিভিন্ন কথার মাধ্যমে রাজি করাতে চেষ্টা করলেন। মহিলা আবারও আগের শর্তে রাজী হল যে, এই মুর্তিকে পুজা করতে হবে। তারা পূনরায় অস্বীকার করলেন। শেষপর্যন্ত মহিলা শর্ত শিথিল করল। সে তাদের কাছে তিনটি অপশন পেশ করল। যেকোন একটি মেনে নিলেই সে তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করবে। অপশনগুলো হল-
১. তোমরা উভয়ে মুর্তি পুজা করবে
২. মানব হত্যা করবে, অথবা
৩. মদ পান করবে।
তারা বলল, এটা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। তবে, এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট অপরাধ হচ্ছে মদ পান করা। এ কথা বলে তারা মদপান করার শর্ত মেনে নিলেন। মদ পান করার পর মাতাল হয়ে গেলে তারা মহিলার সাথে অশ্লীল কাজে লিপ্ত হলেন। এমতাবস্থায় পাশ দিয়ে এক লোক হেটে যাচ্ছিল; অপরাধের কথা ফাস হয়ে যাওয়ার ভয়ে ওই ব্যক্তিকে তারা হত্যা করলেন।
মাতাল অবস্থা কেটে যাওয়ার পর তারা বুঝতে পারলেন যে, তারা অমুক অমুক অপরাধ করেছেন। এরপর তারা আকাশে উঠতে গিয়েও উঠতে পারলেন না। অন্যান্য ফেরেশতারা এদের অপরাধের কথা জানতে পেরে আল্লাহ তায়ালার কাছে এদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগলেন।
তাদেরকে বলে দেয়া হল- তোমরা দুনিয়ার শাস্তি কিংবা আখিরাতের শাস্তি এ দুটোর মধ্য থেকে একটা চয়েজ করে নাও। তারা ভাবলেন- দুনিয়ার শাস্তি তো একসময় শেষ হয়ে যাবে; কিন্তু, আখিরাতের শাস্তির কোন শেষ নেই, অনন্তকাল সেখানে শাস্তি ভোগ করতে হবে। এসব ভেবে তারা দুনিয়ার শাস্তিকে গ্রহণ করে নিলেন। তাদের দুইজনকে ইরাকের বাবেল শহরে দুই পা বেধে ঝুলিয়ে রেখে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। কেউ কেউ বলেন: তারা মহিলাকে এমন কিছু কথামালা শিখিয়ে দিয়েছিলেন যার সাহায্যে তারা আকাশে উঠতেন। এটা শিখে মহিলা আকাশে উঠে গিয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা তাকে আকাশের তারায় রুপান্তর করে দিলেন। রাসুল (সাঃ) ও সাহাবীগণ ওই তারাকে লানত করতেন।
উপরের কাহিনীটা বিভিন্ন তাফসীরের কিতাবে এসেছে। কিছু কিছু তাফসীরকারক এগুলো যে মিথ্যা কাহিনী তা বর্ণনার জন্য উল্লেখ করেছেন, আবার কেউ কেউ এগুলো উল্লেখ করেছেন কিন্তু, এর অসারতা সম্বন্ধে কোন মন্তব্য করেননি।
ইমাম ইবনে কাসীর (রহঃ) তার রচিত তাফসীরে ইবনে কাসীরে সুরা বাকারার ১০২ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় উপরের কাহিনী উল্লেখ করে বলেছেন- এগুলো ইহুদীদের মনগড়া কাল্পনিক কিচ্ছা-কাহিনী। এ ছাড়াও তিনি তার অপরগ্রন্থ আল বিদায়াহ ওয়ান নেহায়াহতেও একই কথা বলেছেন। (আল বেদায়াহ ওয়ান নেহায়াহ: আসমান সৃষ্টি অধ্যায়)
আল্লামা আলুসী (রহঃ) তার রচিত “তাফসিরে রুহুল মাআনীতে” কাযি আয়াজ (রহঃ) এর সুত্রে উল্লেখ করেছেন: “বিভিন্ন তাফসীর কারকরা হারুত মারুতের কাহিনীতে যা কিছু উল্লেখ করেছেন তার কোন কিছুই রাসুল (সাঃ) থেকে সহীহ কিংবা দুর্বল কোন সুত্রেই বর্ণিত হয়নি।”
এছাড়াও ইমাম আশ-শিহাব আল-ইরাকী (রহঃ) বলেছেন: যে বিশ্বাস করবে যে, হারুত ও মারুত নামক দুইজন ফেরেশতাকে যোহরার সাথে অপরাধে লিপ্ত হওয়ার কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে সে যেন মুলতঃ মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে কুফরী করল। কেননা আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের সম্বন্ধে বলেছেন:
لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
অর্থাৎ, তারা (ফেরেশতাগণ) আল্লাহ তায়ালার কোন নির্দেশ অগ্রাহ্য করে না। আর তাদেরকে যা কিছুর নির্দেশ দেয়া হয় তাই তারা পালন করে। (সুরা তাহরীম:৬)
এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَلَا يَسْتَحْسِرُونَ- يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ-
অর্থাৎ, তারা অহংকার করে তাঁর বন্দেগী থেকে বিমুখ হয় না আবার ক্লান্ত ও হয় না। দিন রাত তাঁর প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করতে থাকে, বিশ্রাম নেয় না। (সুরা আম্বিয়া: ১৯-২০) আর রাসুল (সাঃ) ও সাহাবীদের নামে তারা উক্ত তারাকে লানত করতেন বলে যে বর্ণনা এসেছে তা রাসুল (সাঃ) এর নামে মিথ্যা। রাসুলের নামে মিথ্যা হাদীস যারা তৈরী করে এটা তাদের কাজ। (তাফসীরে রুহুল মা’আনী: সুরা বাকারাঃ ১০২ নং আয়াত)
ইমাম ফাখরুদ্দীন আল-রাজী (রহঃ) তার রচিত “তাফসীরে কাবীর” গ্রন্থে উপরোক্ত কাহিনী বর্ণনা করে বলেন: এ বর্ণনা অগ্রহণযোগ্য ও প্রত্যাখ্যাত, কেননা, কুরআন শরীফের কোথাও উপরোক্ত ঘটনাকে সাপোর্ট করার বিন্দুমাত্রও প্রমাণ নেই। বরং, বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে তার অসারতা প্রমাণ করা যায়।
যেমনঃ ১। আগেই প্রমাণ করা হয়েছে যে, ফেরেশতাগণ সমস্ত প্রকার গুণাহ থেকে পবিত্র।
২। তারা বলেছে ওদেরকে নাকি দুনিয়া ও আখিরাতের শাস্তির মধ্য থেকে একটিকে বেঁছে নিতে বলা হয়েছে; এটাও ফাসেদ তথা অযৌক্তিক। বরং, বেঁছে নিতে বললে তো আসলে বেঁছে নিতে বলার কথা – তাওবা ও শাস্তি দুইটার মধ্যে একটাকে। যারা আজীবন তার সাথে শিরক করে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তাওবা ও শাস্তি দুইটার মাঝে একটা বেঁছে নেয়ার অধিকার দিয়েছেন। তাহলে, তিনি এদের দুইজনের উপর কৃপণতা করবেন কেন? (তাফসীরে কাবীর:সুরা বাকারা:১০২ নং আয়াত)
হারুত মারুতের আসল কাহিনীঃ
এবার দেখাযাক হারুত মারুতের আসল কাহিনী কিংবা এই আয়াতের আসল তাফসীরটা কি? তার আগে বিষয়টা সহজে বুঝার সুবিধার্থে আমরা আয়াতের সরল অনুবাদে একবার চোখ বুলিয়ে নিই।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ وَمَا هُمْ بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهِ أَنْفُسَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
অর্থাৎ, আর তারা এমন সব জিনিসের অনুসরণে মেতে ওঠে, যেগুলো শয়তানরা পেশ করতো সুলাইমানী রাজত্বের নামে ৷ অথচ সুলাইমান (আঃ) কোন দিন কুফরী করেননি ৷ কুফরী করেছে সেই শয়তানরা, যারা লোকদেরকে যাদু শেখাতো৷ তারা বাবেল শহরে দুই ফেরেশতা হারূত ও মারূতের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছিল তা আয়ত্ব করার জন্য উঠে পড়ে লাগে৷ অথচ তারা (ফেরেশতারা) যখনই কাউকে এর শিক্ষা দিতেন, তাকে পরিষ্কার ভাষায় এই বলে সতর্ক করে দিতেন যে, সাবধান! আমরা নিছক একটি পরীক্ষা মাত্র, খবরদার! তুমি কুফরীতে লিপ্ত হইও না৷ এরপরও তারা তাদের থেকে এমন জিনিস শিখতো, যা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছিন্নতা এনে দিত৷ একথা সত্য যে,আল্লাহর হুকুম ছাড়া এ পন্থায় তারা কাউকে ক্ষতি করতে পারত না৷ কিন্তু এ সত্ত্বেও তারা এমন জিনিস শিখত যা তাদের নিজেদের জন্য লাভজনক ছিল না বরং ক্ষতির কারণ ছিল৷ তারা ভালো করেই জানত, তারা যা ক্রয় করেছে (এ কাজগুলো করার মাধ্যমে) তাদের জন্য আখেরাতে কোন অংশ নেই। কতই না নিকৃষ্ট জিনিসের বিনিময়ে তারা বিকিয়ে দিল নিজেদের জীবনকে!!হায়, যদি তারা একথা জানতো!(সুরা বাকারা:১০২)
উল্লেখিত আয়াতের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব যে, আল্লাহ তায়ালা হারুত মারুত নামক দুইজন ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন মানুষকে যাদুর বাস্তবতা ও বৈশিষ্ট্য চিনিয়ে দেয়ার জন্য। আয়াতে তাদের কোন অপরাধের দিকে ইংগিতও করা হয়নি। এ ছাড়া তারা উক্ত মহিলার সাথে অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়ার যে কাহিনী রসিয়ে রসিয়ে বলা হয় তার সত্যতার পক্ষে কোন কিছুই কুরআনের এ আয়াতসহ অন্য কোন আয়াতে বলা হয়নি।
উক্ত আয়াতের আসল তাফসীর হল- সুলায়মান (আঃ) এর যুগে সমাজে অধিকহারে জাদুর প্রচলন শুরু হয়। জাদুকরদের জাদু দেখার পর হযরত সুলায়মান (আঃ) এর কাছে আল্লাহ প্রদত্ত মু’জিজাকেও তারা জাদু ভাবতে শুরু করে। অপরদিকে জাদুকরেরাও মানুষের কাছে প্রচার করতে থাকে যে, সুলায়মান (আঃ) জাদু করে মানুষ, জ্বিন ও বাতাসকে নিজের বশ করে নিয়েছে। মানুষও জ্বিন জাদুর কারণেই তার কথামত চলে, বাতাস তার কথামত অতি অল্প সময়ে তাকে নিয়ে অনেক দুরের কোন স্থানে পৌছিয়ে দেয়। কিন্তু, আল্লাহ তায়ালা তাদের এ দাবিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে উপরোক্ত আয়াতের প্রথমাংশে বলেছেন যে, সুলায়মান (আঃ) কুফরী (জাদু করা কুফরী) করেননি বরং, শয়তানেরাই কুফরী করেছে। তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত।
এবার আসি- হারুত মারুতের কথায়।
সুলায়মান (আঃ)এর সময় যখন মানুষেরা মু’জিজা আর জাদুকে একই জিনিস মনে করতে লাগল তখন আল্লাহ তায়ালা হারুত মারুত নামক দুইজন ফেরেশতাকে তাদের কাছে পাঠালেন।তাদের কাজ ছিল জাদুর বিভিন্ন ধরণ মানুষকে শেখানো। যেন মানুষেরা জাদু আর নবীর মু’জিজা দুইটার মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম হয় এবং জানতে পারে যে,সুলায়মান (আঃ) জাদুকর নন; বরং, তিনি আল্লাহ তায়ালার নবী। তারা যাদেরকে এগুলো শেখাতেন তাদেরকে প্রথমেই সতর্ক করে নিতেন যে,আমরা দুনিয়াতে এসেছি তোমাদের নিকট পরীক্ষা হিসেবে।খবরদার এটা শিখে তা আমল করার মাধ্যমে কুফরী করো না।তবে,যদি তা থেকে বেচে থাকার জন্য কিংবা জাদু ও মু’জিজার মধ্যে পার্থক্য করার জন্য শিক্ষাগ্রহণ কর তাহলে তার কথা আলাদা।আর এটাই তোমাদের কাছে কাম্য। কিন্তু, কে শোনে কার কথা? তারা জাদু শিখে তা দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানোসহ অন্যান্য অনৈতিক কাজ করা শুরু করল। এটুকুই আসল ঘটনা। এর বেশী কিছু নয়।
ইমাম রাজি (রহঃ) তার তাফসীরে হারুত মারুতকে দুনিয়ায় পাঠানোর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে দুটি এখানে উল্লেখ করলাম।
১। ওই জামানায় সমাজে জাদুর ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। সেখানে জাদুর অনেক দুর্লভ পদ্ধতিও আবিস্কৃত হয়েছিল। এমনকি জাদুকরেরা মিথ্যা নবুওতের দাবি করে মানুষকে চ্যালেঞ্জও করেছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদের বিপরীতে এই ফেরেশতাদেরকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন।
২। মু’জিজা ও জাদুর মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে মু’জিজা ও জাদু উভয়ের বৈশিষ্ট্য জানা জরুরী। কিন্তু, মানুষের কাছে জাদুর বৈশিষ্ট্য অজানা ছিল। তাই, তাদেরকে জাদুর বৈশিষ্ট্য শেখানোর জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। (তাফসিরে কাবীর: বাকারা: ১০২)
ঘটনাটি যে মিথ্যা তা প্রমাণ করতে পবিত্র কুরআনের আয়াতই যথেষ্ট। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার পরিজনকে জাহান্নাম থেকে বাচাও। যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সেখানে কর্কশ স্বভাব ও কঠোর হৃদয়সম্পন্ন ফেরেশতারা নিয়োজিত থাকবে।তারা কখনো আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করে না এবং তাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হয় তাই তারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে থাকে। (সুরা তাহরীমঃ ৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন:
لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَلَا يَسْتَحْسِرُونَ{19} يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ{20
অর্থাৎ, তারা অহংকারবশতঃ তাঁর বন্দেগী থেকে বিমুখ হয় না আবার ইবাদাতে ক্লান্ত ও হয় না। দিন রাত তাঁর প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করতে থাকে, বিশ্রাম নেয় না। (সুরা আম্বিয়া: ১৯-২০)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বললেন যে, ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশকে অগ্রাহ্য করেন না। আবার বললেন- তাদেরকে যা নির্দেশ দেয়া হয় তাই তারা পালন করে থাকেন। এছাড়া বললেন: তারা দিনরাত ইবাদাতে কাটানো সত্ত্বেও ক্লান্ত হয় না।
যদি আমরা হারুত মারুতের উপরের কাহিনীকে এ আয়াতগুলোর আলোকে যাচাই করি তাহলে, দেখতে পাব-উপরের ঘটনাটা এই আয়াতগুলোর সম্পূর্ণ বিপরীত। অতএব, হারুত মারুতের নামে প্রচলিত এ কাহিনী ফেরেশতাদের নামে অপবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়।
সম্পাদনায়ঃ সুফি মোহাম্মদ আহসান হাবীব
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply