রোজ অর্থ প্রত্যাহ বা প্রতিদিন। কেয়ামত অর্থ মহা প্রলয়। সুতরাং “রোজ কেয়ামত” এর মূল ভাবার্থ পাওয়া যায়, প্রতিদিন মহা প্রলয়। কিন্তু এই রোজ কেয়ামত কে নিয়ে ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে বাকির খাতায়! রোজ কেয়ামত বলতে বুঝানো হচ্ছে একটি অনির্ধারিত দিবস। যে দিবস সম্পর্কে নিদৃষ্ট করে বলা নেই। কিন্তু আসলেই কি বিষয়টি এমন? না, রোজ কেয়ামত বা প্রতিদিন মহা প্রলয় সম্পর্কে আমাদের বিভ্রান্তিমূলক ধারনায় ডুবিয়ে রাখা হয়েছে। রোজ কেয়ামত সম্পর্কে পবিত্র গ্রন্থে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। যাহা ধর্মান্ধ গোমড়াদের জন্য দুর্বোধ্য বিষয়।
পবিত্র গ্রন্থে সুস্পষ্ট ইঙ্গিতঃ
(যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে,
যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে,
যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে,
এবং যখন কবরসমূহ উম্মোচিত হবে,
তখন প্রত্যেকে জেনে নিবে সে কি অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কি পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে।
হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল?
যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন।
যিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামত আকৃতিতে গঠন করেছেন।)
(সূরা আল ইনফিতার , আয়াত-১ হইতে ৮ পর্যন্ত)
উপরে উল্লেখিত পবিত্র গ্রন্থের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত থেকে এটাই প্রমানিত, মহান স্রষ্টা মানুষকে সুন্দর সুবিন্যস্ত ভাবে সৃষ্টি করেছেন। এবং প্রতিদিনই সেই মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। যখন কোন মানুষের দেহ থেকে আত্মা বের হয়ে যায়, তখন সেই মানুষটিই বুঝতে পারে তার দেহ ব্রহ্মাণ্ডে কি ঘটে যাচ্ছে।
বলা হচ্ছে, “যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে,
যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে,
যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে,
এবং যখন কবরসমূহ উম্মোচিত হবে,
তখন প্রত্যেকে জেনে নিবে সে কি অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কি পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে।”
আকাশ বিদীর্ণ হবে, বলতে বুঝানো হয়েছে, মৃত্যুর সময়ে প্রতিটি মানুষের চোখে ঝাপসা দেখতে পায়। কিছুই সে চিনতে পারেন না, বুঝতে পারেন না।
যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে, বলতে বুঝানো হয়েছে, মৃত্যুর সময়ে সবকিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাবে। চোখের আলো নিভে যাবে।
যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে, বলতে বুঝানো হয়েছে, মৃত্যুর সময়ে প্রত্যেক মানুষের দেহ সমুদ্র উত্তাল হয়ে যাবে, দেহের রক্ত প্রবাহ অধিক থেকে অধিকতর হয়ে উঠবে।
যখন কবরসমূহ উম্মোচিত হবে, বলতে বুঝানো হয়েছে, তখন প্রত্যেক মৃত্যু মানুষের জন্য একটি কবর উন্মোচন করা হয়ে থাকে। যেখানে মানুষের সুন্দর দেহাবয়বের শেষ ঠিকানা।
তখন প্রত্যেকে জেনে নিবে সে কি অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কি পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে। বলতে বুঝানো হয়েছে, মৃত্যুর সময়ে প্রত্যেক মানুষের স্বরণ হবে সে কি ভালো কাজ করে এসেছে আর কি মন্দ কাজ করে রেখে গেছে।
এভাবেই প্রত্যেক মানুষের জীবনে যখন মৃত্যু সংঘটিত হয় তখনই উহা প্রত্যেক মানুষের জন্য রোজ কেয়ামত বা প্রতিদিন মহা প্রলয়। কেয়ামত সম্পর্কে যাহা বলা হয় তাহা নিতান্তই রূপক। অনির্দিষ্টকালের কাল্পনিক কেয়ামতের সাথে সত্য এবং বাস্তবতার কেয়ামতের কোনোই মিল নেই।
সুফি মোহাম্মদ আহসান হাবীব
১৭ মে সোমবার, ২০২৩ খ্রীস্টাব্দ,
১৭:০০ অপরাহ্ন
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply