মহা গ্রন্থ আল কোরআন যদি সকল মাতৃ ভাষার মানুষেরা নিজনিজ মাতৃ ভাষায় বুঝতে পারে তাহলেই আল কোরআন হয়ে উঠবে মানব জাতির সত্যিকারের জীবন বিধান। সৃষ্টি হবে মহা স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য। তৈরী হবে শান্তির আলোকিত পথ।
আরবি ভাষাজ্ঞান থাকলেই কিংবা আরবি পড়তে পারলেই কিন্তু আলিম অর্থাৎ জ্ঞানী নয়। আমাদের দেশে এই আরবিজানা জ্ঞানী পন্ডিতদের জ্ঞানের গ্যাড়াকলে পবিত্র ধর্ম ইসলাম আজ কলুষিত। মানুষ ইসলাম অর্থাৎ শান্তির স্বাদ থেকে বঞ্চিত। মহা স্রষ্টার আনুগত্য উপলব্ধি থেকে দূরে সরে রয়েছে। ওই পন্ডিতদের কাছে যেন ইসলাম ধর্মীয় আর মুসলিম হতে হলে আরবি জানতে ও পড়তেই হবে। তাহা বুঝুন আর না বুঝুন! আরবি জানাওলাদের বাণিজ্য ঠিকই অব্যাহতআছে।
সর্বশক্তির আধার যেমন আল্লাহ, তেমনি সর্বজ্ঞানের উৎসও স্বয়ং মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহ। অনন্ত জ্ঞান ভাণ্ডারের চাবি মহাজ্ঞানী আল্লাহর হাতেই। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন, পবিত্র কোরআনে বলা হচ্ছে, “তার (আল্লাহ) জ্ঞান ব্যাতিত তার জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারবেনা।” (সুরা আল বাকারার ২৫৫আয়াতের অংশবিশেষ)।
আরবি ভাষায় পবিত্র আল-কোরআন হওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট বাণী রয়েছে, “আমি সব রাসুলকেই তার জাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি (আল্লাহর বাণী) তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন আর যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত নং ৪)
“এ কোরআন এমন গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ন করেছি; বরকতময়, পূর্ববর্তী গ্রন্থের সত্যতা প্রমাণকারী এবং যাতে আপনি (রাসূল সাঃ) মক্কাবাসী ও পাশ্ববর্তীদেরকে ভয় প্রদর্শন করাতে পারেন। যারা পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করে তারা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তার নিজের সালাত (স্বরণ) সংরক্ষণ করে।” -(সুরা : আন আম, আয়াত নং ৯২)
ভৌগোলিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে স্পষ্টই বুঝা যায়, বর্বর অবিস্বাসী গোমরাহ হিংস্র জাতিদের স্বরল পথে আনয়নের জন্য মহা স্রষ্টা একজন মানুষকে আল্লাহ ‘র বিশেষ মনোনীত প্রতিনিধি (রাসূল/নবী) করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তৎকালীন আরবীয়রা বর্বরতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলো। তাদের এবং আরবের আশপাশের ভাষা ছিলো আরবি। আর মহা স্রষ্টা বর্বর আরবি ভাষার জাতিদের অন্ধকার থেকে আলোয় আনার জন্য সেই ভূখণ্ডে রাহমাতাল্লিল আলামিনকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়ে সৃষ্টজগৎ আলোকিত করলেন। লিখা হয়েগেলো ওই বর্বর আরব জাতির আরবি ভাষায় মহাগ্রন্থ আল কোরআন।
মহাগ্রন্থ আল কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল করার কারণ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং ব্যাখ্যা প্রদান করেন এভাবে: “আমি অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায় কোরআন, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।” (সুরা ইউসুফ, আয়াত নং ২)। অর্থাৎ আরবদের কাছে আরবি ভাষায় আল কোরআন নাজিল করা হয়েছে। কারণ, তাদের মাতৃভাষা আরবি; অন্য ভাষায় নাজিল করলে তাদের বুঝতে এবং অনুসরণ করতে অসুবিধা হতো।
আমাদের এই ভূখণ্ডের মাতৃ ভাষা বাংলা। এখানে একজন শিশু জন্মের পরথেকেই তার মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলতে শিখে। প্রত্যেক ভূখণ্ডের মানুষই তার নিজের মাতৃ ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধকরে। একটি বিষয় অন্য ভাষা শিখে বুঝার চেয়ে মাতৃ ভাষায় বুঝলে সেটা অতি সহজে বুঝেযায়।
মহা গ্রন্থ আল কোরআন যদি সকল মাতৃ ভাষার মানুষেরা নিজনিজ মাতৃ ভাষায় বুঝতে পারে তাহলেই আল কোরআন হয়ে উঠবে মানব জাতির সত্যিকারের জীবন বিধান। সৃষ্টি হবে মহা স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য। তৈরী হবে শান্তির আলোকিত পথ।
সুফী মোহাম্মদ আহসান হাবীব, ০৬ মার্চ ২০২২ খ্রি: ১২:৫৫ মধ্যাহ্ন
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply