মুসলিমদের নামের পূর্বে সংক্ষিপ্ত ভাবে “মোঃ, মো., মুহাঃ, মোহাঃ , MD” লিখা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি অসম্মান প্রদর্শন নয়কি?
আমাদের এই দেশের অধিকাংশ মানুষই মুসলিম। আর মুসলিমরা তাদের প্রিয় রাসুলকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভালবাসে। প্রিয় রাসুলকে ভালবাসার নিদর্শন হলো তার আদর্শ অন্তর দিয়ে ধারন করা। তাকে ভালবাসার ফলস্বরূপ এই দেশের মুসলিমগণ তার আদর্শ গ্রহন করুক আর না করুক নিজেদের নামের পূর্বে সংক্ষিপ্ত রূপে মোহাম্মাদ লিখবেই! সংক্ষিপ্ত রূপে মোঃ, মো., মুহাঃ, মোহাঃ, Md. লিখার ইতিহাস বাঙালিদের হাজার বছরের। সময়টা আজ থেকে অনেক বছর আগের, Banglar শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্যদিয়ে শুরু হয়, ইংরেজদের শাষন আর শোষনের রাজত্য।
মোহাম্মাদ নামের ইতিহাস:
এই উপমহাদেশের Muslim আর হিন্দুদের জমিজমা সংক্রান্ত আইনের ভিন্নতা রয়েছে। তাই এই অঞ্চলের Muslim আর হিন্দুরা জমিজমার সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে সেসময় ব্রিটিশদের সরকারের কাছে নালিশ দিতো, তারা সমাধানের জন্য চেষ্টা করতো কিন্তু তারা সমাধান করতে গিয়ে একটা সমস্যার সম্মুখিন হলো সেটা হলো নাম! সকল নামের পূর্বে Muslim হোক আর হিন্দু হোক শ্রী (পুরুষ) শ্রীমতি (মহিলা) থাকতো। যার কারণে তারা বুঝতো না, কে Muslim আর কে হিন্দু। তাই তাদের এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য তারা এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয় এদেশের মুসলিম জনগণের উপর। যারা Muslim তাদের নামের আগে হবে মোহাম্মাদ (পুরুষ) মোসাম্মৎ (মহিলা), যারা Hindu তাদের নামের পূর্বে হবে শ্রী । প্রমান হিসেবে আমরা দেখতে পাই বাপ, দাদাদের পুরানো দলিল সেখানে দেখা যাবে সকলের নামের আগে শ্রী রয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ব্রিটিশদের নামের পূর্বে তারা Mister ব্যাবহার করতো। ভারতীয়দের (উপমহাদেশ) নামে Mister লেখার পরিবর্তে শ্রী ব্যাবহার হতো। দেওবন্দের (ভারতের) আলেমগন যখন দেখলেন শ্রী শব্দটির সুন্দর ও Valo অর্থ বহন করে, কিন্তু এতে হিন্দুদের সাথে মিশ্রন হয়ে যাচ্ছে, অনেক সময় তো বুঝাই মুশকিল ব্যাক্তিটি হিন্দু না Muslim! এর চেয়েও বড় সমস্যা ছিল, হিন্দু ধর্মের অবতার শ্রী কৃষ্ণের সাথে মিলে যাওয়ার কারনে ভীষন সম্যার সৃষ্টি হয়। যার দরুন ভারতীয় আলেমগন আন্দোলন শুরু করেন যাতে মুসলমানদের নামের পূর্বে শ্রী পরিবর্তন করে লেখা হবে মোহাম্মাদ (নাম দেখেই যেন বুঝায়ায় তিনি মুসলিম) একসময় আইনটি পাশ হয় যে, মুসলিম হলে নামের পূর্বে হবে মোহাম্মাদ R হিন্দু হলে নামের পূর্বে হবে শ্রী । সেই থেকে আজ পযর্ন্ত আমাদের দেশে মোহাম্মাদ লেখার প্রচলন হয়ে আসছে। এটা এক ধরনের চাপিয়ে দেয়া আইন।
আমাদের নামের পূর্বে মোহাম্মাদ লিখে ভালবাসার খাতিরে তাকে অপমান করছি কি?
আমাদের মুহাম্মাদ লেখার ধরন কি? কি ভাবে লিখি? চিন্তা করেছেন কখনও আমরা যেভাবে লিখি যেমন মুহা:, মুহা., মো:, মো., মুহাঃ, মোঃ, এই লেখাগুলো শুধু বাংলা ভাষায় দেখা যায়! অন্যকোন ভাষায় দেখা যায়না। হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) এর নাম ভালবেসে লিখতে গিয়ে ভুল চিহ্ন বা সংক্ষেপ করতে গিয়ে প্রিয় রাসুলকে কী ভাবে সবার মাঝে তুলে ধরলাম আপনারাই বলেন। অনেকে বলতে পারেন নামীদামি অনেক লোকজন নামের পূর্বে এসব ব্যাবহার করছে। আসলে তারাও ভুল ব্যাবহার করছে কারন মোহাম্মাদ নাম সংক্ষেপ হবার কোন কারনই নেই। আমরা (NID) বা (PASSPORT) এর কার্ডে দেখতে পাই ইংরেজিতে আমাদের নামের পূর্বে Md. লেখা। এটা আবার কেমন ব্যবহার। প্রিয় রাসুল হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) এর নামতো নিতে হয় অন্তরের অন্তস্থল থেকে প্রানভরে মনখুলে । আমাদের কিসের এতো কিপ্টেমি? তার নাম সবটুকু লিখতে সমস্যা কোথায়?
আপনাদের জায়গা জমিনের বিশাল সঙ্কট? মুহাম্মদ নামটা লেখার মতো জায়গা আপনার নেই? আপনি যখন এব্রিবিয়েশন করবেনই শুদ্ধভাবে করছেন না কেনো? কেনো এই অশ্রদ্ধার চর্চা?
আমরা মনে করি রাসূলের আরবি নাম হিসেবেই যদি লেখেন তবে পুরো মুহাম্মাদই লেখবেন। আর সংক্ষিপ্ত লিখা মোঃ এটা বাদ দিন। এটা সংক্ষেপের চিহ্ন না । বাংলা ভাষায় সংক্ষেপের চিহ্ন কী সেটা জেনে নিন। প্রয়োজনে ইসলামী চিন্তাবিদ অথবা ইসলামীক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশের দ্বারস্থ হোন। মোহাঃ মুঃ মোঃ না লিখে মুহা. বা মো. যাই লিখুন না কেন প্রিয় রাসুল হযরত মুহম্মাদ (সাঃ) কে সংক্ষিপ্ত রুপে ডাকবেন না। কিছুটা না হয় বিশুদ্ধতার কাছে আসুন। অশুশ্রদ্ধার চর্চার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসুন। প্রিয় রাসুলকে যথাযত সম্মান জানান।
আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষই নামের পূর্বে মুহাম্মাদ কে ধর্মের বিধান ফরজের মত মনেপ্রানে বিশ্বাস করে। যদিও এটা ইসলামের কোন বিধান নয়। এটা ইসলামী সংস্কৃতিও নয় । বিষয়টি হয়ত অনেকেই জানেনা! ফলে যদি কেহ নামের আগে মোহাম্মাদ না লিখে বা না বলে তাহলে দেখা যায়। নামের শুরুতে মোহাম্মাদ না লিখাকে তারা রীতিমত খারাপ ও অন্যায় মনে করেন। কিন্তু তারা ভাবেন না যে কোন সাহাবী (রা:) নামের শুরুতে মোহাম্মাদ শব্দ ব্যবহার করেননি। না কোন তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন আর না কোন ইমাম বা ইসলামিক পন্ডিতগণ এটা ব্যবহার করেছেন।
এমন শব্দের ব্যবহার (নামের আগে MOHAMMAD লিখা) বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশ ছাড়া আরব দেশগুলোতে আজ পর্যন্তও লক্ষ্য করা যায় না।
যারা নামের পুর্বে MOHAMMAD লিখতে চান তারা শর্ট করে না লিখে পুর্ণ নাম তথা মোহাম্মাদ লিখবেন মোহা: বা মো: লেখাটা কিছুতেই যুক্তিসঙ্গত নয়।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঐ ব্যক্তির অকল্যাণ হোক, যার নিকট আমার নাম উচ্চারণ করা হলো, অথচ আমার উপর দুরুদ পাঠ করেনি [তিরমিযি]। আমলে নেই। কেননা আপনি MOHAMMAD লেখছেন কেন? আপনার রাসুলের নাম হিসাবে তাইতো! তাহলে কিভাবে আপনি নিজের নামটা পুর্ণ লেখে রাসুল সা. এর নামটা অপুর্ণ তথা শর্ট করে লিখছেন! এটা সঙ্গত নয়, এতে আদবের খেলাফ হয়। আমাদের উচিৎ সন্তানদের এমন নাম রাখা যাতে শুরুতে MOHAMMAD না লিখলেও সে একজন মুসলিম সে অমুসলিম হয়ে যাবে না। তার পরও যদি ব্যাবহার করেন তাহলে সর্ম্পূন মোহাম্মাদ ব্যাবহার করবেন মো: এটা ব্যবহার না করা উত্তম হবে।
মোহাম্মাদ অর্থ প্রশংসিত। আরবি ‘মোহাম্মাদ’ শব্দটির মূল ধাতূ হচ্ছে ‘হা’ ‘মীম’ ‘দাল’ অর্থ্যাৎ হামদুন। হামদুন শব্দের অর্থ প্রশংসা, সন্তুষ্টি, কৃতজ্ঞতা, প্রতিদান, হক আদায় করা ইত্যাদি। আর হামদুন থেকেই ‘তাহমিদ’ গঠিত। এর অর্থ হলো- সদাসর্বদা প্রশংসা করা হয়। সুতরাং ‘মোহাম্মাদ’ শব্দটির অর্থ হলো সদাসর্বদা যার প্রশংসা করা হয়।
কোরআনে কারিমে এ নামটি চার বার এসেছে। সেগুলো হলো- সূরা আলে ইমরান- ১৪৪, সূরা আহযাব- ৪০, সূরা মোহাম্মাদ- ২ ও সূরা আল ফাতাহ এর ২৯ নং আয়াত। হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। চারটি সূরায় মাত্র চার জায়গায় তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যান্য স্থানে তার গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অথবা আইয়ুহান নবী কিংবা আইয়ুহার রাসূল বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এটা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান ও মর্যাদার পরিচয় বহন করে।
সুতরাং আসুন আমরা সকল মুসলিম আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে নামের পূর্বে মোহাম্মদ সংক্ষিপ্ত ভাবে না লিখে পূর্ণাঙ্গ ভাবে লিখার চর্চা শুরু করি।
মূল ভাবনায ও লেখক:
শেখ নজরুল ইসলাম,
কবি লেখক ও গবেষক
পরিচালক প্রশাসন,
দুরন্ত সত্যের সন্ধানে (দুসস)
সংকলনে:
সুফি মোহাম্মদ আহসান হাবীব
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply